• বহরমপুরে টোটো চালককে কুপিয়ে খুন ছিনতাইকারীদের 
    বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: যাত্রী সেজে টোটোয় উঠে নৃশংসভাবে চালককে খুন করল দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে বহরমপুর শহরের মোল্লাগেড়ের ধারে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন টোটোচালককে। মৃতের নাম, কাশেম শেখ(৪৭)। বাড়ি খাগড়ার ঝিল্লি মুসলিমপাড়ায়। ঘটনার খবর পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিস তাঁকে উদ্ধার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বুধবার মেডিক্যালের পুলিস মর্গে দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। বহরমপুর থানার এক পুলিস অফিসার বলেন, কী কারণে খুন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। টোটোটি উদ্ধার করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে। 

    পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহরমপুরের মোহনা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গভীর রাতে কাশেমের টোটোয় ওঠে কয়েকজন। মোল্লাগেড়ের ধারে নির্জন এলাকায় গিয়ে কাশেমের গলায় ছুরি চালিয়ে দেয় তারা। রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করতে করতে এক বন্ধুকে ফোন করেন কাশেম। তারপর এলোপাথাড়ি কুপিয়ে কাশেমকে ফেলে রেখে টোটো নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। টোটো নিয়ে পালানোর সময় ভাগীরথীর উপর রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতু পার করে উত্তরপাড়ার মোড়ের কাছে একটি মারুতি ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে টোটোর। উদ্ধারের জন্য সেখানেই কয়েকজন টোটোর কাছে চলে আসে। তখনই টোটো ছেড়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়ে পুলিস ঘটনাস্থল থেকে টোটোটি উদ্ধার করে। 

    মৃতের পরিবারের অভিযোগ, টোটো ছিনতাইয়ের জন্য দুষ্কৃতীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়ায় দিনেরবেলায় রাস্তার ভিড়ে টোটো চালাতে পারতেন না কাশেম। প্রতিদিন রাতে ফাঁকা রাস্তাতেই টোটো চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু নৃশংস ঘটনায় প্রাণ গেল তাঁর। মৃতের দুই সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে। ঘটনার পর শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার। 

    তবে এই প্রথমবার নয়, চার বছর আগেও কাশেমের একটি টোটো ছিনতাই হয়। সেই দুষ্কৃতীরা এই কাজ করল কিনা তদন্তের দাবি জানিয়েছে পরিবারের লোকজন। মৃতের স্ত্রী আদরা বিবি বলেন, আমার স্বামী তো অক্ষম। কারও সঙ্গে পেরে উঠবে না। তাই ওকেই টার্গেট করেছিল। ও ভালো করে কথাও বলতে পারে না। যেখানে যেত আমাকে নিয়ে যেত। দিনে চালাতে পারত না বলেই রাতে টোটো নিয়ে বের হতো। এই টোটো চালিয়েই আমাদের সংসার চলত। দুই সন্তান রয়েছে। তিন-চারটে লোন চলছে। কীভাবে এসব সামাল দেব বুঝতে পারছি না। 

    মৃতের দিদি সুন্দরা বিবি বলেন, চার বছর আগে ভাইয়ের টোটো ছিনতাই করেছিল কয়েকজন। সেবার হাত-পা বেঁধে রেখে ওকে ফেলে দিয়ে টোটো নিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। সেই টোটো উদ্ধার হয়নি। পরে আবার দুটো লোন নিয়ে এই টোটো কেনা হয়েছিল। সেটাও ছিনতাই করার জন্য ভাইকে খুন করল। আমরা দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই। 

    বহরমপুরে মোহনা বাসস্ট্যান্ড এলাকার টোটোচালক সুব্রত সাহা বলেন, আমরা রাতে মানুষকে পরিষেবা দিই। এই ঘটনার পর বেশি রাতে টোটো নিয়ে বেরতে ভয় লাগছে। অনেক সময় রাতবিরেতে বহরমপুর শহরের বাইরেও যেতে হয়। এখন যদি টোটো ছিনতাইয়ের জন্য আমাদের উপর হামলা চালানো হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব?
  • Link to this news (বর্তমান)