নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: আর কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকা নয়। একশ দিনের কাজের টাকা মিটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবাস যোজনার টাকাও দেবেন তিনিই। ইতিমধ্যেই এনিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়া জেলায়। ডিসেম্বরের ২০ তারিখ থেকে মিলবে প্রথম কিস্তির টাকাও। দীর্ঘ বছর ধরে বঞ্চিত থাকার পর অবশেষে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন জেলার বাসিন্দারা। দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন বাংলার অগ্নিকন্যাকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০২২ সালের আবাস যোজনার যে তালিকা চূড়ান্ত হয়েছিল, সেই তালিকা ধরে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী মোট এক লক্ষ ১৮ হাজার ৬০০ জন প্রাপকের বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় কিংবা অন্য কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে যদি কারও বাড়ি ভেঙে থাকে, সেইসব বাড়িতেও সমীক্ষা হবে। মোট ৪৩৩টি দল এই সমীক্ষার কাজ করছে। সমীক্ষার কাজে রয়েছেন সমস্ত দপ্তরের সরকারি কর্মীরাই। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে সার্ভের কাজ। রাজ্যের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ ডিসেম্বর থেকেই আবাস যোজনার প্রাপকদের প্রথম কিস্তির টাকা ছাড়া হবে। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) রানা বিশ্বাস বলেন, ‘সার্ভের কাজ জোরকদমে চলছে। রাজ্যের তরফে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সেই অ্যাপের মাধ্যমেই বাড়ি প্রাপকের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করছি সময়ের মধ্যেই আমরা কাজ শেষ করতে পারব।’
রাজ্যের এই পদক্ষেপে খুশি জেলার বাসিন্দারা। সরকারি বাড়ির আশায় দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা অপেক্ষায়। কিন্তু রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ মনোভাবের জন্য চোখের জল ফেলতে হয়েছে আবাস প্রাপকদের। তাঁরাই মনে করাচ্ছেন, ২০২২ সালের শেষের দিকে একবার বাড়ি তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যেই নতুন বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাসিন্দাদের সেই আশায় জল ঢেলে দেয় কেন্দ্র। তবে, প্রাপ্য আদায়ের জন্য কেন্দ্রের কাছে অনুনয়-অনুরোধ-আন্দোলন সবই করেছে তৃণমূল। তাতে লাভ হয়নি।
চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকবে না রাজ্য। একশো দিনের কাজের টাকা দিয়ে নেত্রী প্রমাণ করে দেন, তিনি যা কথা দেন, সেই কথা রাখেন। কেন্দ্র টাকা না দিলে রাজ্যের তরফেই বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণাও করেন বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’। অবশেষে সেই কথা রাখতে চলেছেন তিনি।
ফের আবাস যোজনার বাড়ি মিলবে তা ভেবেই আনন্দে আত্মহারা বলরামপুরের সুশীলা মাহাতর পরিবার। বৃদ্ধা বলেন, একটা বাড়ির জন্য কোথায় না আবেদন করিনি। বিজেপির লোকেরা এসে বলল, তাদের ভোট দিলেই বাড়ি মিলবে। ভোটও দিলাম। কিন্তু তারপর নেতাদের আর দেখা নেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঠিক আমাদের পাশে রয়েছেন। জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধায় বলেন, কথা দিয়ে কথা রাখার নামই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গরিব মানুষের কথা একমাত্র তিনিই ভাবেন।