বিশ্বভারতী নিয়ে কেন্দ্র নিরুৎসাহী বলেই স্থায়ী উপাচার্য নেই: ব্রাত্য
বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, বোলপুর: বিশ্বভারতী নিয়ে কেন্দ্র সরকারের কোনও উৎসাহ নেই। সেজন্য ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হয়নি। আর করলেও এমন কাউকেই করবে, যে এই জায়গাটাকে কলুষিত করবে। বোলপুরে এসে এমনই বললেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বুধবার নানুর বিধানসভার মুলুক গ্রামের পল্লিবন্ধু ক্লাবের মাঠে বিজয়া সম্মিলনির আয়োজন করেছিলেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। কয়েক হাজার কর্মী সমর্থক ভিড় জমিয়েছিলেন এই সভায়। সেই সভা থেকেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন ব্রাত্য।
দুর্গাপুজোর পর থেকেই বীরভূমের তৃণমূল নেতৃত্ব জেলার প্রতিটি প্রান্তে বিজয়া সম্মিলনি করে কর্মী সমর্থকদের চাঙ্গা করছেন। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বীরভূমের তৃণমূল সংগঠনের প্রশংসা করে ব্রাত্য বলেন, এই দুর্যোগেও মাত্র ছ’টা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে এত লোকের সমাগমে আমি অভিভূত। এই ভিড় প্রমাণ করে বীরভূমে তৃণমূলের সংগঠন কতটা মজবুত। এখানে বিরোধীরা সাফা হয়ে যায়। এর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভানুমতির খেলের চমকও রয়েছে। কারণ তাঁর মাথার মুকুটে কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো ৬৫টা পালক রয়েছে। এরপর রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, আমাদের সরকারকে বিব্রত করার জন্য রাজ্যে নানা উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে। গরিবদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলো করছেন, অনেক বড়লোকদের সেটা পছন্দ নয়। এর আগেও সারদা, নারদা, সন্দেশখালি, চাল চুরি প্রভৃতি নিয়ে প্রচুর কথা খরচ করেছে বিরোধীরা। বারবার তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছে। তারপরেও বিজেপির আসন তো বাড়েইনি, বরং কমেছে। আসন্ন উপনির্বাচনে ছ’টা আসনেই আমরা জিতব। আর জি কর প্রসঙ্গে বলেন, একটা ছোট শ্রেণি বারবার গণধর্ষণের দাবি করছে। সিবিআইও সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। এটা নিয়ে অনেকেই ঘৃণ্য রাজনীতি করছেন। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আন্দোলনকে অত্যন্ত সহানুভূতির চোখে দেখছেন। উত্তরপ্রদেশে এই ধরনের আন্দোলন হলে বুলডোজার চালানো হয়। আন্দোলনকারীদের হাত-পা মেরে ভেঙে দেওয়া হয়। এমনকী, রাতারাতি মানুষ গায়েব হয়ে যায়। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শপিংমলের বাড়বাড়ন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শপিং মল বানাচ্ছেন আপত্তি নেই। কিন্তু যে মানুষগুলোর ঘর ভেঙে হচ্ছে, তারা গায়েব হয়ে যাচ্ছে কেন? এরপর অনুব্রতর নাম না করে তাঁকে বীরের আখ্যা দিয়ে বলেন, বীরভূম বীরদের ভূমি। এখানকার বীরদের দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু বিজেপি দমিয়ে রাখতে পারেনি।
এরপর সাংবাদিক সম্মেলনে বিশ্বভারতী প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, বিশ্বভারতী নিয়ে কেন্দ্র সরকারের কোনও উৎসাহ নেই। বিজেপি বুঝেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবীরা মৌলিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে। ফলে, কেন্দ্র সরকার বিশ্বভারতীকে নিয়ে ভাববে না, বা ভাবলেও এমন লোক পাঠাবে যে জায়গাটাকে কলুষিত করবে। তাই কেন স্থায়ী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, সেটা বিজেপিই বলতে পারবে।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যপাল সহযোগিতা করেননি বলেই সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। রাজ্যপাল এগুলি ভালো চোখে দেখছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতে যাবে এই ভেবে উনি নার্ভাস হয়ে গিয়েছেন। উনি ঠিকই ভাবছেন, উপাচার্য কারা হবেন তা মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবেন। ওঁর কোনও এক্তিয়ার নেই।