সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কার্যত আত্মসমর্পণ করেছে মূল্যবৃদ্ধির কাছে। জনতা তিমিরেই। সবরকম নিয়ন্ত্রণের বাইরে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। আম জনতার সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে উঠেছে শুধুমাত্র বাজার করতে গিয়েই। এক-দু’মাস নয়, করোনাকাল থেকেই চলছে এই দুর্দশা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সেদিকে নজর নেই বললেই চলে। স্বদেশের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তিনি আগাগোড়া চুপ। কিন্তু হঠাৎ রাশিয়ায় কাজানে ব্রিকস সম্মেলনে সেই মোদির মুখেই শোনা গেল মূল্যবৃদ্ধি রোধের দাওয়াই। বুধবার সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় সব দেশকে একজোট হতে হবে। সব দেশ সম্মিলিতভাবে খাদ্য নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করুক। মূল্যবৃদ্ধিকে পরাস্ত করতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বিদ্যুৎ সুরক্ষা এবং জলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন এবং সাউথ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত বিশ্বগোষ্ঠী ব্রিকসের সম্মেলন চলছে রাশিয়ার কাজান প্রদেশে। সেই সম্মেলনে এদিন মোদির প্রস্তাব, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার বিশ্বস্তরে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ, মাল্টিল্যাটারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কগুলি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কার করতে হবে। ব্রিকস সম্মেলন থেকেই এই শপথ ও প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার। অথচ দেশে এমন কথা শুধু মোদি কেন, তাঁর সরকারের কারও মুখে শোনা যায় না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস তো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধি কমার এখনই কোনও সম্ভাবনা নেই। মাঝেমধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বিমাসিক নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠক হয়। আর নিয়ম করে কমিটির সদস্যরা রেপো রেট একই রেখে দিয়ে জানিয়ে দেন, মূল্যবৃদ্ধি না কমলে ঋণ বাবদ সুদের হার এরকমই চড়া থাকবে। অর্থাৎ একদিকে মূল্যবৃদ্ধি এবং অন্যদিকে উচ্চ সুদের হারে ইএমআই—‘ডাবল ইঞ্জিন’ যন্ত্রণায় বিদ্ধ জনতা। গরিবের অবস্থা ভয়ঙ্কর। ব্যয় বেশি, আয় কম।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এই পরিস্থিতিতেও চাঁদে চন্দ্রযান পাঠানো নিয়ে আত্মপ্রশংসায় পঞ্চমুখ। জি-২০ সম্মেলনের কৃতিত্ব দাবি করেছেন। রামমন্দির নিয়ে লোকসভার ভোটে টানা প্রচার করে গিয়েছেন। মহিলা সংরক্ষণ আইনের সাফল্যগাথা গেয়েছেন। ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশনের প্রস্তুতি চরমে তুলেছেন। বিরোধীদের জেলে পাঠিয়েছেন। নতুন কাশ্মীরের মসিহাও হয়েছেন। তাঁর ভাষণে, বিবৃতিতে, ঘোষণায়, প্রতিশ্রুতিতে এবং সরকারি সিদ্ধান্তে শুধুমাত্র একটি বিষয় অনুপস্থিত— নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। চলতি বছরে দু’বার বাজেট পেশ করেছেন তাঁর অর্থমন্ত্রী। অথচ মূল্যবৃদ্ধির দাওয়াই সম্পর্কে সেই দুই বাজেটই নীরব। ভারতবাসীকে আজকাল ‘আমার পরিবার’ হিসেবে সম্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। নিজের পরিবার যেখানে মূল্যবৃদ্ধির জেরে নাজেহাল, দেশের নাম বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে যেখানে লজ্জাজনক স্থানে (১০৫তম), সেখানে বিদেশে গিয়ে মোদি আবার বিশ্বগুরু হতে চাইলেন। দাওয়াই দিলেন বিশ্বক্ষুধার মোকাবিলারও।
কয়েকদিন আগেই জানা গিয়েছে ভারতের কৃষকদের প্রবল উদ্বেগের কথা। কারণ, ডিএপি সারের সরবরাহ কমে যাচ্ছে। ব্যয় বাড়ছে রবিচাষের। সারের দাম আরও বাড়বে। অর্থাৎ শীতকালের সব্জির সরবরাহ কমবে অথবা দাম বাড়বে অস্বাভাবিকভাবে। অর্থাৎ, আরও ধুঁকবে দেশবাসী। মোদি অবশ্য তারপরও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে মেউদাসীন। বরং বিশ্বমঞ্চে মুশকিল আসানের ভূমিকাই তাঁর বেশি পছন্দ!