• বর্তমানের খবরের জের: আশ্রমে আশ্রয়ের আশ্বাস দিয়ে সহবাস, কাটোয়ায় ধৃত বৃন্দাবনের ধর্মগুরু
    বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: মঙ্গলকোটের প্রত্যন্ত গ্রামের যুবতীকে আজীবন আশ্রমে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগে বৃন্দাবনের এক স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। ধৃতের নাম মহারাজ গোবিন্দবল্লভ শাস্ত্রী। একাধিক মহিলার সঙ্গে  যৌন সংসর্গ ও ধর্ষণের মত গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এই স্বঘোষিত ইউটিউব বাবা গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রী-র বিরুদ্ধে। শুধু এরাজ্যই নয় উত্তর প্রদেশের মথুরা-বন্দাবন থেকে পাঞ্জাবেও এই স্বঘোষিত গুরুর বিরুদ্ধে কুকীর্তির ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। আর ‘বর্তমান’-এর প্রকাশিত সেই খবরের জেরে এবার গোবিন্দবল্লভ শাস্ত্রীকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। বুধবার ধৃতকে কাটোয়া মহকুমা এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক সাতদিন পুলিসি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

    গত ২০ জুলাই থানায় গোবিন্দবল্লভের নামে লিখিত অভিযোগ জানান মঙ্গলকোটের ওই যুবতী। তিনি পুলিসকে জানান, ছোট থেকেই তিনি আধ্যাত্মিক পথে থাকতে পছন্দ করেন। ইউটিউবে তিনি বৃন্দাবনের ওই ধর্মগুরুর ধর্মীয় কথা শোনেন। তারপরই প্রভাবিত হয়ে ধর্মগুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর বৃন্দাবনের ধর্মগুরু ওই যুবতীকে তাঁর ধর্মীয় পাঠ শোনার জন্য ডাকেন। যুবতী ও তাঁর মা ২০২৩ সালে বীরভূমের একটি জায়গায় ওই ধর্মগুরুর পাঠ শোনার জন্য যান। সেখানে মঙ্গলকোটের যুবতীর সঙ্গে ধর্মগুরুর আলাপ হয়। তারপর থেকেই ফোনে ধর্মগুরুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ওই বছরই ধর্মীয় পাঠ শোনার জন্য আবার যুবতী মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় যান। সেখানে ওই ধর্মগুরু যুবতীকে ব্রহ্মচর্য পালন করতে বলেন। পাশাপাশি ওই যুবতীকে আশ্রমে সারাজীবন ঠাঁই দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। অভিযোগ, এরপরই ওই ধর্মগুরু যুবতীর সঙ্গে সহবাস করেন। পরে চলতি বছরে মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ও নন্দীগ্রামে ধর্মীয় পাঠ শুনতে যাওয়ায় ওই ধর্মগুরু সহবাস করেন। ঘটনার পর থেকে ওই ধর্মগুরু মঙ্গলকোটের যুবতীকে আশ্রমে ঠাঁই না দিয়ে চরম দুর্ব্যবহার করেন। এমনকী ওই ধর্মগুরুর স্ত্রীও যুবতীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। ধর্মগুরু ও তাঁর স্ত্রী ওই যুবতীকে আত্মহত্যার প্ররোচনাও দিয়েছেন বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগে ওই যুবতী নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। যুবতী এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এমনকী   প্লাস্টিক সার্জারি করতে হয়েছে বলেও দাবি যুবতীর। কিন্তু এত কিছুর পরও পুলিস ওই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ করে শেষে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য জানতে চান ‘এত কিছুর পরও পুলিস কেন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি?’ পুজোর ছুটির পর ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে। কিন্তু তার আগেই পুলিস এই ধর্মগুরুকে গ্রেপ্তার করল। মঙ্গলকোট থানা জানিয়েছে, আপাতত ঘটনার তদন্ত চলছে। যদিও ওই তরুণীর আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ধর্মগুরুকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাঁর ইউটিউব চ্যালেন বন্ধ করতে পুলিস এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকী ফেসবুকেও রমরমিয়ে এই স্বঘোষিত গুরুর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে। আমার মক্কেলের সঙ্গেও একাধিক ভিডিও সে ইচ্ছাকৃত ছড়িয়ে দিচ্ছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)