রেশন দুর্নীতি: শহরে এক ব্যবসায়ীর বাড়িসহ ১৪ জায়গায় ইডির তল্লাশি
বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রেশন দুর্নীতির টাকা কোথায় লগ্নি হয়েছে, তা জানতে বুধবার সাতসকালেই তল্লাশি অভিযানে নেমে পড়ল ইডি। ইডি সূত্রের খবর, কলকাতার এক বড় মাপের ব্যবসায়ী, হাওড়ার এক রেশন ডিলারের দোকান-বাড়িসহ মোট ১৪টি জায়গায় এদিন তল্লাশি চালানো হয়। কলকাতার ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বেআইনি টাকা লেনেদেনের রসিদ।
রেশন দুর্নীতিতে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন বাকিবুর রহমান ও শঙ্কর আঢ্য। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী এখনও জেলবন্দি। বিভিন্ন নথি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইডি কলকাতার এক ব্যবসায়ীর খোঁজ পায়। দেখা যায়, তাঁর ও পরিবারের নামে ৯০টি কোম্পানি খোলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে ২০১১-র পর থেকে একাধিক কোম্পানি নথিভুক্ত করা হয়েছে আরওসির কাছে। ওই সমস্ত কোম্পানির আয়কর রিটার্নের নথি খতিয়ে ঘাঁটতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন আশি থেকে একশো কোটি টাকার লেনদেন রয়েছে একেক মাসে! তাঁদের আয় বেড়েছে প্রত্যেক বছর। কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যে তাঁদের একাধিক ব্যবসা রয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর মোবাইলের কল ডিটেইলস খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বাকিবুর রহমানসহ রেশন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সেখান থেকেই তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন যে এই কাণ্ডে তাঁর যোগ থাকতে পারে। তার ভিত্তিতে বুধবার তাঁর বাঙুরের বাড়িতে সাতসকালেই পৌঁছে যায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির টিম। রেশন দুর্নীতিতে জড়িতদের মধ্যে কারা এবং কত টাকা পাঠিয়েছিল তার একটি তালিকা উদ্ধার হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পর এই টাকা আবার অন্যত্র চলেও গিয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, এখানে টাকা আসার পর এই ব্যবসায়ী স্বনামে-বেনামে খোলা বিভিন্ন কোম্পানিতে লগ্নি করেছেন। বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে লেনদেন দেখিয়ে সেই টাকা আবার বের করেও নিয়ে গিয়েছেন অন্যত্র। ‘কালো’ টাকাকে ‘সাদা’ করার বিনিময়ে মোটা টাকার কমিশন পেয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। তাঁকে জেরার জন্য ডাকা হচ্ছে বলেই খবর।
ইডির অন্য টিম পৌঁছে যায় হাওড়ায় উলুবেড়িয়ার উত্তর জগদীশপুর এবং রাজাপুর থানার গোয়ালবেড়িয়ায় ও পাঁচলায় রেশন ডিলারদের বাড়িতে। ইডির দাবি, খাতায়-কলমে এই গোডাউন থেকে যে পরিমাণ চাল-আটা রেশন দোকানে যাওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে অনেক কম মালই গিয়েছে। বিভিন্ন সরকারি সামগ্রী এখান থেকে চলে গিয়েছে খোলা বাজারে। এই বিষয়ে দুই ডিলারকে দীর্ঘক্ষণ জেরার পাশাপাশি রেজিস্টার বুক খতিয়ে দেখেন তদন্তকারী অফিসাররা। জগৎবল্লবপুরে সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির অফিসেও যান তাঁরা। উত্তর ২৪ পরগনায় গাইঘাটার এক ডিলারের গোডাউনেও তল্লাশি চলে। সমস্ত জায়গা থেকেই রেজিস্টার খাতা নিয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, রেশন ডিলাররা সরকারি মাল বাজারে বেচে বিপুল টাকা রোজগার করেছেন। এই টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, এখন খোঁজ চলছে তার।