রাতের শহরে টেরিটি বাজারে কাঠের বাক্সের গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দাউ দাউ করে জ্বলছে কাঠের বাক্সের গোডাউন। লেলিহান শিখার সঙ্গে মিশমিশে কালো ধোঁয়া। মধ্য কলকাতার এজরা স্ট্রিটে তখন ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছবি স্পষ্ট।
কালীপুজোর আগে মধ্যরাতে কলকাতার আলোর বাজারে ভয়াবহ আগুন লাগল। বুধবার রাত ৮টা নাগাদ পোদ্দার কোর্টের উল্টোদিকে একটি কাঠের গোডাউনে আগুন লাগে। ওই গোডাউনে বৈদ্যুতিন সরঞ্জামও মজুত ছিল। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ১৫টি ইঞ্জিন। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় দমকল বাহিনীকে। গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের জেরে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের দোকানে। একাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গভীর রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় হেয়ার স্ট্রিট ও বউবাজার থানার পুলিস। প্রাথমিক তদন্তে দমকল ও পুলিসের অনুমান শর্ট সার্কিটের জেরেই আগুন লেগেছে। রাতেই আগুন নেভানোর প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে যান দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও কলকাতা পুলিসের ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। লালবাজার জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর নেই। কী কারণে আগুন লাগল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গোটা এজরা স্ট্রিটে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
শহরের বাহারি আলোর বাজার হিসেবে পরিচিত এজরা স্ট্রিট। কালীপুজো ও দীপাবলির আগে গোটা এলাকা আলোর বাজার হিসেবে সেজে ওঠে। হরেক আলো প্রচুর পরিমাণে মজুত করে রাখা হয় এই বাজারে। সেখানেই একটি ঘিঞ্জি গলির মধ্যে কাঠের বাক্স তৈরির গোডাউন রয়েছে। তার ছাদে টিনের ছাউনি। সেখানেই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ধোঁয়া দেখতে পান। আশপাশে একাধিক দোকান, বহুতল থাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় এক আলোর দোকানের ব্যবসায়ী বলেন, ‘ধোঁয়া দেখে আমরাই আগুন নেভানোর জন্য বালতি করে জল নিয়ে আসি। কিন্তু, গোডাউনটি বন্ধ ছিল। ভিতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। কাঠ, কাগজ, শোলা সহ শুকনো দাহ্য বস্তু মজুত ছিল সেখানে। এছাড়া বৈদ্যুতিন সরঞ্জমাও থাকার ফলে আগুন দ্রুত বিধ্বংসী আকার নেয়। শোলা থাকায় মাত্রাতিরিক্ত ধোঁয়া তৈরি হয়।’
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দমকল বাহিনীকে খবর দেন স্থানীয় আলো ব্যবসায়ীরা। মিনিট দশেকর মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যায় পুলিস ও দমকল বাহিনী। প্রাথমিকভাবে সেখানে ১০টি ইঞ্জিন কাজ শুরু করে। কিন্তু, সরু গলির ভিতরে আগুন লাগায় সেখানে সহজে পৌঁছতে পারেননি দমকল কর্মীরা। তার জেরে দু’দফায় মোট ১৫টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে নিয়ে আসতে বাধ্য হয় দপ্তর। আগুনের উৎসস্থলের তিন দিক থেকে পৌঁছনোর চেষ্টা করে দমকল বাহিনী। তীব্র ধোঁয়ার জেরে মাস্ক লাগিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন কর্মীরা। প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক ধরে কাজ চললেও উৎসস্থলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় দমকল কর্মীদের। এরপর গোডাউনের টিনের ছাদ ভাঙতে বাধ্য হয় দমকল বাহিনী। দু’টি ইঞ্জিনের সাহায্যে সেখান থেকে জল দিয়ে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন কর্মীরা।