নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ফের বিতর্কে টালা থানা। গুরুতর আঘাতের পরেও জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করার অভিযোগ উঠেছে তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে। আহতের পরিবারের তরফে বারবার অভিযোগ জানানো হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। এতে জামিন পেয়ে যায় অভিযুক্ত। আহত ব্যক্তির যেদিন মৃত্যু হয়, ওইদিনই তদন্তকারী অফিসার তড়িঘড়ি আদালতে হাজির হন জামিন বাতিলের জন্য। বিষয়টি নজরে আসার পরই ওসি দ্রুত ওই অফিসারকে সরিয়ে দিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারাতেও কেস রুজু হয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা যাচ্ছে, টালা থানার বাসিন্দা সঞ্জয় সরকারকে (৪৪) গত ৬ সেপ্টেম্বর টালা পোস্ট অফিসের সামনে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। এতে তিনি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পান। মাথায় রক্তক্ষরণও হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। সঞ্জয়বাবুর ভাগনি গোপা সেন জানিয়েছেন, মামা স্থানীয় এক মহিলাকে তিন লক্ষ ধার দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি টাকা শোধ করছিলেন না। ৬ সেপ্টেম্বর সকালে ওই মহিলা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সঞ্জয়বাবুর মুখোমুখি পড়ে যান। টাকা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর ওই মহিলা বাড়ি ফিরে ছেলেকে সমস্ত ঘটনার কথা বলেন। অভিযুক্ত অরিন্দম দত্ত ওই পোস্ট অফিসের সামনে আসে। সেখানে সঞ্জয়বাবুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁর মুখে সপাটে ঘুসি মারে বলে অভিযোগ। এতে তিনি পড়ে যান। এরপর রাস্তায় ফেলে অভিযুক্ত অরিন্দম তাঁর মাথা বুক সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করতে থাকে বলে অভিযোগ। সঞ্জয়বাবু সেখানেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন। মাথা থেকে রক্ত বেরতে থাকে। তাঁকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যান। পাশাপাশি তাঁরা থানায় গিয়ে অরিন্দম ও ওই মহিলার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ করেন। সেই সময় টালা থানার ডিউটি অফিসার ছিলেন সাব ইনসপেক্টর সঞ্জীব ঘোষ। তিনি অভিযোগ নিলেও জামিনযোগ্য ধারায় কেস রুজু করেন। এমনকী গুরুতরভাবে জখম করা ও খুনের চেষ্টার ধারাও দেননি বলে গোপাদেবীর দাবি।
সঞ্জয়বাবুর ভাইঝি রিমা সরকারের বক্তব্য, বারবার তদন্তকারী অফিসারকে বলেও লাভ হয়নি। এমনকী ওই অফিসার দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। ওসির সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও দেখা করতে দিতেন না তিনি। ২৯ সেপ্টেম্বর সঞ্জয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ওই অফিসার শিয়ালদহে হাজির হন অভিযুক্তের জামিন বাতিল করতে। মৃত্যুর পর গোটা বিষয়টি ওই পরিবারের কাছ থেকে শোনেন ওসি। তিনি তৎক্ষণাৎ ওই তদন্তকারী অফিসারের হাত থেকে তদন্তভার কেড়ে নিয়ে অন্য এক অফিসারকে দেন। নতুন তদন্তকারী অফিসার অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা যোগ করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। সেই সঙ্গে কথা বলেন পরিবারের সঙ্গে। আদালত এই আবেদন মঞ্জুরের পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত সাব ইনসপেক্টর সঞ্জীব ঘোষকে ফোনে ধরা হলে তিনি প্রথমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে দায় ঠেলার চেষ্টা করেন। পরে বলেন, ঠিক ধারায় তিনি মামলা করেছিলেন। তাহলে কেন তাঁকে সরানো হল, এই নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। তবে জানান, তিনি অভিযোগকারীর পরিবারের সঙ্গে কোনও খারাপ ব্যবহার করেননি বা ওসির সঙ্গে দেখা করতে বাধাও দেননি।