নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: পাওনাদারের ভয়ে দীর্ঘ দিন বাড়ি ছাড়া ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। সম্প্রতি আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তাঁদের ছেলে। এরপরেই বুধবার দুপুরে বাড়ি থেকে দম্পতির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। ঘটনাটি এইচএসসি বোস বি গার্ডেন থানার লক্ষ্ণীনারায়ণতলার। মৃত বৃদ্ধ দম্পতির নাম মলয় সাহানা (৬১) ও মধুরিমা সাহানা (৫২)। মানসিক অবসাদের কারণেই তাঁরা আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিসের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ হাওড়ার লক্ষ্মীনারায়ণতলার একটি তিনতলা ফ্ল্যাটে থাকতেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। গত প্রায় এক বছর তাঁদের এলাকায় দেখতে পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা। ফ্ল্যাটটিতে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সংযোগ কিছুই নেই। গত মঙ্গলবার ফ্ল্যাটে ওই দম্পতিকে ঢুকতে দেখেন স্থানীয়রা। এদিন দুপুর গড়িয়ে গেলেও ফ্ল্যাট থেকে কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে বৃদ্ধ দম্পতির এক আত্মীয় তাঁদের ডাকাডাকি করেন। এরপরেই সন্দেহ হওয়ায় এজেসি বোস বি গার্ডেন থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিস এসে দরজা ভেঙে ঘরের ভিতর ঝুলন্ত অবস্থায় দম্পতির দেহ উদ্ধার করে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দম্পতির একমাত্র ছেলে কৌস্তভ সাহানাকে তিন দিন আগে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে রাজ্য পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ, উচ্চ আদালতের এক বিচারপতির সই নকল করে কলকাতার কালীঘাট এলাকায় এক বৃদ্ধার বাড়ি ও জমি বিক্রি করে দিয়েছিল সে। জমি বিক্রির জন্য আইনি খরচ বাবদ আরও ২০ লক্ষ টাকা ওই বৃদ্ধার থেকে হাতিয়ে নিয়েছিল। পরে বৃদ্ধার সন্দেহ হওয়ায় তিনি টালিগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছিল সিআইডি। এরপরেই ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, মৃত দম্পতির কীর্তিমান ছেলে বহু বছর ধরেই অনেকের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করে এসেছে বলে অভিযোগ। প্রায়ই পাওনাদারেরা টাকা চাইতে বাড়িতে আসত। সে কারণেই গত এক বছর বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন বৃদ্ধ মা-বাবা। হাওড়া সিটি পুলিসের এক কর্তা বলেন, ‘ছেলের কীর্তির কারণেই মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। তবে তাঁরাও কোনও আর্থিক প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’