এই সময়: স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য মেট্রো স্টেশনে এসেছিলেন মা। কিছুক্ষণ পরে পাঁচ বছরের একরত্তি মেয়েকে প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রেখে তার সামনেই দ্রুতগতিতে প্ল্যাটফর্মে ঢুকে আসা মেট্রোর রেকের সামনে লাফিয়ে পড়েন তিনি।বুধবার সকালে আত্মহত্যার এই মর্মান্তিক ঘটনা কলকাতা মেট্রোর ব্লু-লাইন বা নর্থ-সাউথ মেট্রো করিডরে। অতীতে মেট্রোর ট্র্যাকে বহু আত্মহত্যা এবং তার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বুধবার সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে যে ঘটনা ঘটেছে চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে, গত ৪০ বছরে তার দ্বিতীয় নজির মনে করতে পারছেন না মেট্রোর কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পার্ক স্ট্রিট চত্বরের একটি নামী স্কুল ছুটির পর সেই স্কুলের নার্সারি ক্লাসের পড়ুয়া মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পার্ক স্ট্রিট স্টেশন থেকে মেট্রোয় চেপেছিলেন বরাহনগরের বাসিন্দা বছর চৌত্রিশের ওই মহিলা। কোনও কারণে যাত্রা শুরুর অল্প পরেই চাঁদনি চক স্টেশনে তাঁরা নেমে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীদের জানা গিয়েছে, মহিলার মোবাইলে একটি ফোন এসেছিল। ফোনে কথা বলতে বলতেই ওই মহিলা যাত্রী মেয়েকে নিয়ে ট্রেন থেকে চাঁদনি চকে নামেন। ফোনে কথা শেষ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্ল্যাটফর্মে দক্ষিণেশ্বরগামী একটি রেক ঢুকছিল। ঠিক তখনই মেয়েকে ধাক্কা মেরে পিছনে সরিয়ে দিয়ে তিনি রেকটির সামনে লাফিয়ে পড়েন। প্ল্যাটফর্মের অন্য যাত্রীরা কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ঘটনা ঘটে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রেকটি তখন সবে মাত্র চাঁদনি চক স্টেশনে ঢুকছিল বলে তার গতি যথেষ্ট বেশি ছিল। রেকের বেশির ভাগ অংশই তখনও টানেলের মধ্যে ছিল। ঘটনার আকস্মিকতা এবং ভয়াবহতায় স্টেশনে উপস্থিত যাত্রীদের পাশাপাশি স্তম্ভিত হয়ে যান স্টেশনের কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীরাও। বর্ষীয়ান মেট্রোকর্মীরা বলছেন, ‘অতীতে দেখা গিয়েছে, মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে যাঁরা আত্মহত্যা করেন, তাঁরা সাধারণত একাই আসেন। এই প্রথম একজনকে দেখলাম, যিনি নিজের ছোট্ট মেয়েকে সঙ্গে এনে তার সামনে ট্র্যাকে ঝাঁপ দিয়েছেন।’
কলকাতা মেট্রোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথমে রেকের সঙ্গে মহিলার শরীর ধাক্কা খেয়ে ট্র্যাকের উপর পড়ে এবং তারপরই তাঁর শরীরের উপর দিয়ে রেকের একাধিক কামরা চলে যায়। ততক্ষণাৎ পাওয়ার ব্লক নিয়ে থার্ড লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। রেকের নীচ থেকে ওই মহিলাকে বের করার চেষ্টা শুরু হয়। যাত্রীদেরও বের করে আনা হয় রেক থেকে। পাওয়ার ব্লক নেওয়ার জন্য ওই সময়ে দক্ষিণেশ্বর থেকে গিরিশ পার্ক এবং কবি সুভাষ থেকে ময়দান পর্যন্ত খণ্ডিত রুটে ট্রেন চালানো হয়। রেকের নীচ থেকে মহিলার দেহ উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মেট্রো জানিয়েছে, প্রায় ৫৪ মিনিট পরিষেবা বিঘ্নিত থাকার পর শেষ পর্যন্ত বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত পুরো পথে নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা শুরু হয়।
পরে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ ওই মহিলার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। খবর পেয়ে মহিলার স্বামী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা মেট্রো স্টেশনে আসেন। তাঁদের হাতে মেয়েটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন ওই মহিলা?
মৃত মহিলার প্রতিবেশীদের কথায় ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, স্বামীর সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। কয়েকজনের অনুমান, মহিলা সম্প্রতি একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং সেটি জানাজানি হয়ে যায়। তা নিয়ে টানাপড়েনের জেরেই সম্ভবত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ওই মহিলা।