এই সময়: ভিন রাজ্যের বিজেপি নেতাদের ভিড় বাড়ছে ঝাড়খণ্ডে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভোট প্রচারের জৌলুসও। সেই জৌলুসের কিছুটা এ রাজ্যের উপনির্বাচনেও এসে পড়ুক, এমনটাই চাইছেন বঙ্গ-বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁদের সেই বাসনা সম্ভবত পূরণ হচ্ছে না। কারণ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে বিধানসভা ভোট ফেলে পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামানোর ফুরসত পাচ্ছেন না বিজেপির শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।অথচ, দিল্লির নির্দেশ মেনে ঝাড়খণ্ডে ভোট-প্রচার সেরে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পলরা। সূত্রের খবর, বাংলায় উপনির্বাচন আবহের মধ্যেই এ রাজ্যের আরও কিছু বিজেপি নেতার ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার কথা। যার প্রেক্ষিতে বাংলার এক বিজেপি বিধায়কের আক্ষেপ, ‘ঝাড়খণ্ডের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় আমাদের প্রচার করতে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের রাজ্যের উপনির্বাচনে কেউ প্রচারে আসবেন না। এটা কোনও যুক্তি হতে পারে!’
রাঁচির সিংহভাগ হোটেলই আপাতত বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি নেতাদের দখলে। উত্তরপ্রদেশে, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাটের বহু পদ্ম নেতা ঘাঁটি গেড়েছেন ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন শহরে। তাঁরাই ওই রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারের নিয়ন্ত্রক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সফরসূচিও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। কবে, কোন মন্ত্রী ভোট-প্রচারে আসবেন, তার তালিকা ঝাড়খণ্ডের বিজেপি নেতা-কর্মীদের ফোনে ফোনে ঘুরছে। আগামী ১৩ নভেম্বর থেকে ঝাড়খণ্ডে দুই দফার নির্বাচন শুরু। ১৩ নভেম্বর বাংলার ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রেও উপনির্বাচন।
বঙ্গ-বিজেপির একাংশ চাইছে, ঝাড়খণ্ডে ভোট প্রচারে যাওয়া দলের হেভিওয়েটরা ফেরার পথে বাংলাতেও অন্তত একবেলার জন্য ঘুরে যান। তাতে প্রচার পর্বে তৃণমূলের উপর যেমন স্নায়ুচাপ বাড়বে, তেমনই দলের নিচুতলাকে বার্তা দেওয়া যাবে যে, এখনও পশ্চিমবঙ্গ নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের পাখির চোখ।
সূত্রের খবর, বঙ্গ-বিজেপির তরফে সেই আর্জি পাঠানো হয়েছিল দিল্লিতে। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে রাজ্য বিজেপি নেতাদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, উপনির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারে যান না। তাই ঝাড়খণ্ড থেকে ফিরতি পথে তাঁদের মেদিনীপুর, তালড্যাংরার রণক্ষেত্রে ঢুঁ মারার সম্ভাবনা কম। তবে ব্যক্তিগত স্তরে কোনও কেন্দ্রীয় নেতা চাইলে বাংলায় উপনির্বাচনের প্রচারে আসতেই পারেন।
এই প্রসঙ্গে বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার মন্তব্য, ‘অমিত শাহ তো ২৭ অক্টোবর কলকাতায় আসছেন। তখন নিশ্চয়ই উনি উপনির্বাচন নিয়ে নিশ্চয়ই কোনও বার্তা দেবেন। তাতেই তো যা প্রচার হওয়ার হয়ে যাবে। আর কাকে দরকার!’ যা নিয়ে রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘অমিত শাহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যে কোনও জায়গায় যেতেই পারেন। কিন্তু ওরা ভোটপাখি। ভোটের সময়েই ওদের দেখা যায়। সামনে উপনির্বাচন বলেই হয়তো উনি আসছেন।’
রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিজেপি সর্বভারতীয় দল। তাই কোনও রাজ্যে বিধানসভা ভোটের সময়ে ভিন রাজ্যের নেতারা সেখানে প্রচার করতে যান। এটাই বিজেপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্তু উপনির্বাচনে তা হয় না। তখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নেতারাই ভোট-প্রচার করেন।’
ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা ভোটে এ বার ফোকাস করেছে সিপিএমও। ইতিমধ্যেই তারা ঝাড়খণ্ডের ন’টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। গতবার বামেদের মধ্যে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনই শুধু ঝাড়খণ্ডের একটি আসনে জিততে পেরেছিল। সিপিএমও এ বার খাতা খুলতে চাইছে সেখানে। সূত্রের খবর, দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম নিজেও ঝাড়খণ্ডে ভোট-প্রচার করতে যাবেন।