কিশোরীকে মার, সাসপেন্ড মহিলাদের নিরাপত্তায় থাকা পিঙ্ক ভ্যানের পুলিশকর্মীর
এই সময় | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
শিলিগুড়ি: রেলে মহিলা পুলিশকর্মী উইনার্সদের নিয়োগ নিয়ে প্রশংসার মধ্যেই কালির ছিটে লাগল শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের গায়ে। পিঙ্ক ভ্যানে থাকা মহিলা পুলিশ আধিকারিক তানিয়া রায় বুধবার রাতে শিলিগুড়ির ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কিশোর-কিশোরীকে অকারণে মারধর করেন বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রথমে প্রতিবাদ করেন। তাতেও থামাতে না-পেরে মোবাইলে ভিডিয়ো তোলার চেষ্টা করতেই হুঁশ ফেরে আধিকারিকেরা। তখন তিনি ভুল স্বীকার করে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেন বলে অভিযোগ।স্থানীয়দের তোলা ওই ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি 'এই সময়') ভাইরাল হয়। পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকদের কাছেও পৌঁছয় ওই ভিডিয়ো। তার পরেই শুরু হয় সমালোচনা। অপরাধ দমনে রাজ্যজুড়ে পিঙ্ক ভ্যান চালুর যে উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার, এই ঘটনায় তা ধাক্কা খায়। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের উপ নগরপাল (ট্রাফিক) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, 'ঘটনাটি নজরে আসার পরে তানিয়া রায় নামে ওই মহিলা আধিকারিককে বৃহস্পতিবার সাসপেন্ড করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।'
বুধবারই রেল পুলিশ ট্রেনের মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তায় উইনার্স বাহিনী নিয়োগ করে। প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন রেলযাত্রীরা। একই ভাবে পুজোর আগে শিলিগুড়িতে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য পিঙ্ক ভ্যান চালু করা হয়। বছর পনেরোর ওই কিশোর-কিশোরী বুধবার রাত আটটা নাগাদ শ্রীগুরু বিদ্যামন্দিরের মাঠে বসে কথা বলছিলেন। সেই সময়েই পিঙ্ক ভ্যানে থাকা ওই মহিলা পুলিশ আধিকারিক সেখানে হাজির হন।
তিনি তাদের 'এখানে কী করছিস' জানতে চাওয়ার পরেই মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে ছুটে যান। তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন করলে ওই পুলিশ আধিকারিক অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা তখন মোবাইলে ভিডিয়ো তুলতে শুরু করেন। এরপরেই ওই আধিকারিক নিজের ভুল স্বীকার করে ভ্যানে ওঠার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে এলাকার মহিলারা তাঁকে ঘেরাও করে হাত টেনে ধরে গাড়িতে উঠতে বাধা দেন। শেষ পর্যন্ত স্থানীয়দের চেষ্টায় আধিকারিক-সহ পিঙ্ক ভ্যানের পুলিশকর্মীরা এলাকা ছাড়তে সক্ষম হন।
ওই কিশোরীর দাবি, 'পড়াশোনা করছিলাম। ক্লান্ত লাগছিল বলে বাড়ির সামনের স্কুলের মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আমায় দেখে আমারই এক আত্মীয় সামনে এগিয়ে এসে কথা বলতে শুরু করে। এর মধ্যেই পুলিশ ভ্যানটি মাঠে ঢোকে। তার পরে আমাদের অশ্লীল গালিগালাজ করে এক মহিলা অফিসার মারধর শুরু করে দেয়।'
এক অভিভাবক মাম্পি চক্রবর্তী বলেন, 'চারদিকে মহিলাদের উপরে কত অত্যাচারের কথা শুনতে পাই। সেগুলো থামাতে পারছে না পুলিশ। আর বাচ্চাদের ধরে মারধর করবে, এটা কেমন কথা!' মারধরের সময়ে স্থানীয় কাউন্সিলারকে ফোন করা হলেও তিনি সাহায্য করতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের শিলিগুড়ি জেলা চেয়ারম্যান অলক চক্রবর্তী বলেন, 'এলাকার বাসিন্দারা সমস্যায় পড়লে কাউন্সিলারকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। খোঁজ নেব। প্রয়োজনে পদক্ষেপ করা হবে।'