ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেই কি বান্ধবী নিয়ে প্রেমের নাটক রাহুলের?
বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে কৃষ্ণনগরের ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চেয়েছিল রাহুল বোস। কিন্তু বেঁকে বসেছিল ছাত্রীটি। বেগতিক বুঝে এক বান্ধবীর সঙ্গে ‘প্রেমের অভিনয়’ করে তাঁকে জানাতে চেয়েছিল, জীবনে দ্বিতীয় একজনের উপস্থিতিকে। ওই বান্ধবীর সঙ্গে ঘোরাফেরা বাড়িয়েছিল বলে অভিযোগ। ঘটনার দিন তাকে নিয়ে রানাঘাটে সিনেমাও দেখতে গিয়েছিল রাহুল। সারাদিন তার সঙ্গে কাটিয়েছিল সে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই—এসব জেনে গিয়ে যেন স্ব-ইচ্ছায় জীবন থেকে সরে যায় ছাত্রীটি। কিন্তু এভাবে চিরতরে সরে যাবে, সেটা হয়তো ভাবতেই পারেনি রাহুল! ছাত্রীর রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় এমনই সূত্র উঠে আসছে পুলিসের তদন্তে।
রাহুলের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। বাড়ি ফিরে আসে সন্ধ্যা নাগাদ। দীর্ঘ সময় ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিল রাহুল। ওই দিন বহুবার রাহুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল ছাত্রীটি। কিন্তু ফোনের সুইচ অফ থাকার কারণে তা করে উঠতে পারেনি। বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে তখনই একরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল বলে ধারণা তদন্তকারীদের। সেই কারণেই রাহুলের এক বন্ধুকে ফোন করে কেরোসিনের বোতল ও দেশালাই কেনার কথা জানিয়েছিল ছাত্রীটি। জানা গিয়েছে, ওইদিন রাহুলের খোঁজ নেওয়ার জন্য তাঁর মাকেও তিনবার ফোন করেছিল সে। প্রতিবারই রাহুলের মা তাকে জানান, ছেলে রানাঘাট গিয়েছে। যদিও কার সঙ্গে গিয়েছে, তা রাহুলের পরিবারের লোকজন জানতেন না। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ রাহুল বাড়িতে ফেরে। তার কিছু পরেই ছাত্রীটি ফের রাহুলের মাকে ফোন করে। তিনি ছাত্রীকে রাহুলের ফিরে আসার খবর দেন। সেই সঙ্গে জানতে চান, সে রাহুলের সঙ্গে কথা বলতে চায় কি না? কিন্তু ছাত্রীটি বলে—‘রাহুল ফিরেছে, এতেই আমার শান্তি।’ রাহুলের পরিবারের দাবি, ছাত্রীটি অনেকবার আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিল রাহুলকে।
এমনিতেই বেশ কয়েকদিন ধরে রাহুল ও ছাত্রীটির সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। সেই টানাপোড়েনকে আর জিইয়ে না রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল ছাত্রীটি। কিন্তু সে যে এভাবে জীবনকে বাজি ধরবে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি তার কিংবা রাহুলের বন্ধুরা। এদিকে, বৃহস্পতিবার রাহুলের পুলিসি হেফাজত শেষ হয়। তাকে নতুন করে ফের আরও পাঁচদিনের পুলিসি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এক আধিকারিক বলেন, ‘তদন্ত চলছে। আরও পাঁচদিনের পুলিসি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’
তদন্তে উঠে আসছে, ঘটনার দিন রাত দশটার পর বন্ধুর ফোন থেকে রাহুল ছাত্রীটির সঙ্গে শেষবার কথা বলে। তখনই সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাব মন থেকে মেনে নিতে পারেনি ছাত্রীটি। রাহুলকেও কেরোসিনের বোতল ও দেশালাই কেনার কথা বলেছিল সে। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, সেটা জেনেও রাহুল কেন চুপচাপ ছিল? এমনকী, ফোনে কথা বলার সময় রাহুল ও তার ওই বন্ধু গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠেই ছিল। সেটা ঘটনাস্থল থেকে কয়েকশো মিটার দূরে। তাই ছাত্রীর আগুনে পুড়ে মৃত্যুর সময় রাহুল ঘটনাস্থলে ছিল কি না, সেটাও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
পুলিসের অনুমান, সেই কথোপকথনের পরই জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয় ছাত্রীটির। ফলে, রাত এগারোটা থেকে রাত তিনটের মধ্যে কোনও একসময় চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। কিন্তু ছাত্রীর ব্যাগে পাওয়া কেরোসিনের বোতলটি কোন দোকান থেকে কেনা হয়েছিল, সেটা এখনও জানতে পারেনি পুলিস। পুলিসের সন্দেহ, মৃত ছাত্রীর এক আত্মীয়ের দোকান রয়েছে। সেখানে নাকি কেরোসিন তেল বিক্রি হয়। যা পুলিসের নজরে রয়েছে।