• যোগীরাজ্য থেকে বিপুল মাদক নিয়ে পাচারের পথে গ্রেপ্তার বিজেপি নেতা, তোলপাড় পানাগড়ে
    বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল ও সংবাদদাতা, মানকর: যোগীরাজ্য থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক নিয়ে বাংলায় ঢুকে গ্রেপ্তার হল বিজেপি নেতা। উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে এক কেজি ১২০ গ্রাম ব্রাউন সুগার নিয়ে ট্রেনে করে পানাগড়ে আসে গলসি-২ মণ্ডলের বিজেপির কনভেনর অজিতকুমার দাস। মঙ্গলবার বিকেলে পানাগড়ে নেমে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার পথে কাঁকসায়  রাজ্যের স্পেশাল টাস্কফোর্স তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পুলিসের চোখে ধুলো দিতে অতি সাধারণ প্লাস্টিকের ব্যাগে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার ব্রাউন সুগার নিয়ে যাচ্ছিল বুদবুদের শুকডালের এই বাসিন্দা। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বুদবুদে গত বছর বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার হওয়ার ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল তার। গোয়েন্দাদের দাবি, এই ব্যক্তি আন্তঃরাজ্য মাদক কারবারের বড় মাথা। উত্তরপ্রদেশ থেকে মাদক এনে শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ, বীরভূমেও পাচার করে।

    এক সপ্তাহ আগেই বিজেপি তাকে মণ্ডল কনভেনরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছে। গলসি-১ ব্লকের বুদবুদ, মানকর ও চাকতেঁতুল, এই তিন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির সংগঠন বিস্তারের গুরুদায়িত্বও তার কাঁধে দেওয়া হয়। একজন মাদক কারবারের মাথাকে বিজেপি কেন সংগঠনের বড় পদে আনল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সে বুদবুদের শুকডালে থাকলেও তাদের আদি বাড়ি নদীয়া জেলায়। শুকডালে একটি সাইবার ক্যাফে থাকলেও তার আসল কারবার মাদক পাচার করা। বুধবার অভিযুক্তকে আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক ১২ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। কাঁকসার এসিপি সুমন জয়শওয়াল বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাদক কারবারের সঙ্গে তার যোগসূত্রের খবর আমাদের কাছে ছিল। পুলিস, এসটিএফ তাকে হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করছিল। এদিন সেই কাজ সফল হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের পর বিজেপির ভূমিকা নিয়ে তোপ দেগেছে রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সহ সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, এটাই কি যোগীরা঩঩জ্যের ডবল ইঞ্জিন সরকারের উন্নয়ন? উত্তরপ্রদেশ থেকে ব্রাউন সুগার সরবরাহ করা! ব্রাউন সুগার বাংলায় আনছে বিজেপি। আমরা মনে করি বাংলায় নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপে বিজেপি মদত দিয়ে আমাদের বদনাম করার ষড়যন্ত্র করছে। বিজেপি জেলা সহ সভাপতি রমন শর্মা বলেন, কয়েকদিন আগেই ওকে মণ্ডল কনভেনর করা হয়েছে। দীর্ঘদিন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আইন আইনের পথে চলছে। তা বলে যে দল কিডনি পাচার করে, মানবদেহ পাচার করছে, তাদের জ্ঞান শুনব না।  বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে বারবার কাঁকসার নাম উঠে এসেছে। কখনও এই এলাকা থেকে জঙ্গি ধরা পড়েছে। একাধিকবার পুলিস, এসটিএফ মাদক কারবারের পর্দা ফাঁস করেছে। মূলত এখান দিয়েই পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়ক দিয়ে বীরভূম হয়ে উত্তরবঙ্গ যাওয়া যায়। আবার অদূরে দুর্গাপুর হয়ে সহজেই দক্ষিণবঙ্গ ও দক্ষিণভারত যাওয়া যায়। এখানে দিল্লি-কালকাতা মূল রেলপথও রয়েছে। তাই অনেক কারবারেরই ‌জংশন পয়েন্ট হিসেবে এটি ব্যবহার হয়। যদিও এভাবে রাজনৈতিক দলের নেতার সরাসরি মাদক কারবারে গ্রেপ্তার সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি। আরও বড় প্রশ্ন, পুলিস গোয়েন্দাদের নজরে যে মাদক কারবারি, তাকে নতুন করে কেন দায়িত্বে আনল বিজেপি? গেরুয়া শিবির কি কোনও খোঁজখবর না নিয়েই তাকে পদে বসিয়েছে? 
  • Link to this news (বর্তমান)