কাশীপুরে দুই সপ্তাহের মধ্যে একই পরিবারের ৪ জনের অসুস্থ হয়ে মৃত্যু
বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কাশীপুর ব্লকের জিয়াড়া গ্রামে একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জানা গিয়েছে মৃতেরা হল, টুরী মান্ডি (৭০), সারথী মান্ডি (৫৩), জবামণি মান্ডি (৫৪) এবং রানিবালা মান্ডি (৪৭)। মৃতেরা সম্পর্কে মা ও মেয়ে। মৃতদের মধ্যে একমাত্র জবামণির বিয়ে হয়েছিল। তবে তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পরে তিনি জিয়াড়ার বাপের বাড়িতেই থাকতেন। বাকি দু’জনের বিয়ে হয়নি। স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ওই পরিবারের প্রত্যেকের মৃত্যুই স্বাভাবিক কারণে হয়েছে। তবুও একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যুর জন্য গ্রামে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে নিয়মিত স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্মীরা গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে ঘটনার খবর পেয়ে ইতিমধ্যে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা গ্রামে গিয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের তরফ থেকে পরিবারকে বোঝানো হয়েছে ভয়ের কোনও কারণ নেই।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাস বলেন, ওই পরিবারের প্রত্যেকেরই স্বাভাবিক কারণে মৃত্যু হয়েছে। তবু স্বাস্থ্যদপ্তর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫ অক্টোবর পরিবারে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জবামণির মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার পরেই ১৬ অক্টোবর রক্তাল্পতার কারণে বাড়িতে চিকিৎসারত অবস্থায় রানিবালার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে পেট খারাপ ও পেট ব্যথার অসুস্থতা নিয়ে টুরী ও সারথীদেবী কল্লোলী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন ১৬ অক্টোবর টুরী দেবী হাসপাতালে মারা যান। সারথী দেবীর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাঁকুড়ায় স্থানান্তরিত করা হয়। বাঁকুড়ায় চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় ২১ অক্টোবর সারথী দেবীও মারা যান। ডেথ সার্টিফিকেটে টুরী দেবীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদযন্ত্র সমস্যা এবং সারথী দেবীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে কিডনি জনিত সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কাশীপুর ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিবারে ১৬ অক্টোবর দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই স্বাস্থ্য দপ্তরের সদস্যরা গ্রামে যান। গ্রামের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। গ্রামে মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়।
পরিবারের সদস্য আজান মান্ডি বলেন, আমার স্ত্রী ও তিন মেয়ে মারা গিয়েছে, একমাত্র ছেলে দিনমজুরের কাজ করে। একজন নাতি রয়েছে। সেও চেন্নাইয়ে কাজ করে। অভাবের সংসার সারথী দেখাশোনা করত। সারথী ব্লকের একটি আদিবাসী হস্টেলের সুপারভাইজারের কাজ করত। পরিবারের অবস্থা ভালো না হলেও মেলেনি আবাস যোজনা। স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে, নাতি নাতবউ সকলকে নিয়ে আমাদের পরিবারে ১২ জন সদস্য ছিল। কাশীপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রিয়দর্শী যশ বলেন, একেই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর ঘটনা সত্যি আশ্চর্যজনক। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। আগামী দিন যাতে পরিবারে কেউ কোনও সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য আমরা পরিবারের পাশে রয়েছি। -নিজস্ব চিত্র