ঝড় মোকাবিলায় ৩ জেলায় তৈরি প্রশাসন, ত্রাণশিবিরে সরল ৯০ হাজার মানুষ
বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম: ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পূর্ব মেদিনীপুরে ৯০হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত উপকূলবর্তী এলাকায় মানুষজনকে সরানো হয়েছে। মোট ৩৩৫টি ত্রাণশিবিরে তাঁদের রাখা হয়েছে। ‘ডানা’ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে নবান্ন থেকে প্রতি মুহূর্তে আপডেট নেওয়া হচ্ছে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন অফিসে ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম(০৩২২৮-২৬২৭২৮) খোলা হয়েছে। এছাড়াও জেলা পুলিস, স্বাস্থ্যদপ্তর এবং বিদ্যুৎ বণ্টন, সেচ বিভাগ সহ বিভিন্ন দপ্তরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই সাইক্লোন ল্যান্ডফল করার সতর্কবার্তা ছিল দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তিন জেলায় প্রশাসন সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। বিপদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরের অফিসার-কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তিন জেলায় আকাশ মেঘলা ছিল। মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগে কালীপুজোর প্রস্তুতি ভীষণ ব্যাহত হয়। উপকূলবর্তী এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া ছিল। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি বাড়ে। দীঘা, তাজপুর, মন্দারমণির সি-বিচে যাওয়ার প্রতিটি রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে পুলিস, সিভিল ডিফেন্স মোতায়েন করা হয়েছে। রামনগর-১ ব্লকের জলধায় সমুদ্রের বাঁধের অবস্থা ভালো নয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, দপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কৌশিক মণ্ডল জলধায় সমুদ্রবাঁধ পরিদর্শন করেন। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী এবং পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য দীঘায় থেকে প্রস্তুতির কাজে তদারকি করেন। রাতেই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার বার্তা পেয়ে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চায়নি প্রশাসন। দুর্বল কাঁচা বাড়ি থেকেও মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়। বিভিন্ন স্কুল বিল্ডিংয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন, পিএইচই, স্বাস্থ্য, সেচ, দমকল এবং সিভিল ডিফেন্স টিমকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যদপ্তরের পক্ষ থেকে আগেই নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দু’-তিনদিনে ডেলিভারির তারিখ থাকা সন্তানসম্ভবা মহিলাদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখা, জেনারেটরের ব্যবস্থা এবং মেডিক্যাল টিম গঠন সহ যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রাখা হয়। বৃহস্পতিবারও উপকূল জুড়ে মাইকিং করা হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক বলেন, ৯০হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনশোর বেশি শিবিরে তাঁরা আছেন। দীঘা, মন্দারমণির সব হোটেল খালি করা হয়েছে। সি-বিচে যাতায়াতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আমরা সবরকম প্রস্তুতি সেরে রাখছি।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৭৫টি জায়গায় ৩২হাজারের বেশি মানুষকে সরানো হয়েছে। তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন ও পুলিসের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় ৪৪৯জন সন্তানসম্ভবা মাকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য সিভিল ডিফেন্স, পূর্ত, এবং বনদপ্তরের বিশেষ টিম রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ৬৮টি টিম রেডি রেখেছে। এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ টিম প্রস্তুত রয়েছে। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই।ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রতিটি ব্লককে সতর্ক করেছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। প্রত্যেক ব্লক প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা টিম রেডি রয়েছে। (রামনগরের জলধায় সমুদ্রবাঁধ পরিদর্শনে সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া সহ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা।-নিজস্ব চিত্র)