সংবাদদাতা, ঘাটাল: গ্রামগঞ্জ থেকে বিলুপ্ত হতে বসেছে শঙ্খিনী তথা শাঁখামুটি সাপ। যার ফলে ঘাটাল মহকুমায় বাড়ছে কালাচ ও চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব। সোমবার সকালে দাসপুর থানার পলতাবেড়িয়া থেকে সেই বিলুপ্ত প্রজাতির একটি বিশালাকার শঙ্খিনী সাপ উদ্ধার হল। ওই সাপটি দেখার জন্য এদিন সকালে গ্রামে ভিড় জমে যায়। ঘাটাল মহকুমা সোশ্যাল ফরেস্ট্রির অধীন বন্যপ্রাণী উদ্ধারকারী টিমের সদস্য মলয় ঘোষ সাপটিকে উদ্ধার করে আনেন। তিনি বলেন, ‘শাঁখামুঠি তথা ব্যান্ডেড ক্রেইট (Banded Krait) জাতীয় সাপের বংশবিস্তার উদ্বেগজনকভাবে কমে যাচ্ছে। আমরা সাপটি উদ্ধার করেছি। সাপটির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার পর উপযুক্ত জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হবে।’
এদিন ওই গ্রামের রঞ্জন মাইতি তাঁর পুকুরে মাছ ধরার জন্য জাল ফেলেছিলেন। এদিন সকালে ওই জাল তুলতে গিয়ে দেখা যায়, বিশালাকার এই সাপটি জালে জড়িয়ে গিয়েছে। রঞ্জনবাবু বলেন, ‘আমি তখনই সাপটি না মেরে বনদপ্তরে খবর দিই। কিছুক্ষণের মধ্যেই মলয়বাবু ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাপটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।’
সাপ মানেই গা ঘিনঘিন, সাপ মানেই ভয় লাগা এই ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যাবে শঙ্খিনী সাপকে দেখলে। শরীর জুড়ে হলুদ কালোর ডোরাকাটা।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিষধর সাপগুলির মধ্যে অন্যতম হল এই শঙ্খিনী বা শাঁখামুটি। আকারে বেশ বড়। আট ফুট পর্যন্ত সাইজে দেখা গিয়েছে। ফণা নেই এই সাপটির। এককামড়ে ঢালতে পারে চার মিলিগ্রাম পর্যন্ত নিউরোটক্সিন বিষ। কামড়ালে বলা যায় মৃত্যু নিশ্চিত। প্রকৃতি তীব্র বিষ দিলেও শঙ্খিনী লাজুক ধরনের। বিগত এক দুই দশকের মধ্যে এই সাপের কামড়ের কথা শোনা যায়নি। বনাঞ্চল এবং জলাভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শাঁখামুঠি সাপের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। নগরায়ণ, কৃষি জমির সম্প্রসারণ এবং বনভূমি কাটার ফলে তাদের আশ্রয়স্থল হুমকির মুখে পড়েছে। কিছু এলাকায় শাঁখামুঠি সাপের বিষের জন্য বা ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে তাদের শিকার করা হয়। যদিও তারা সাধারণত মানুষের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে না, তবুও অবৈধ শিকার তাদের সংখ্যা হ্রাসের একটি কারণ বলে অনুমান করা হচ্ছে। জল ও মাটির দূষণ সাপের বাস্তুতন্ত্র এবং খাদ্য সরবরাহে প্রভাব ফেলে। দূষিত পরিবেশে তাদের বংশবৃদ্ধি ও বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এরা মূলত অন্যান্য সাপ, ব্যাঙ, ও ছোট ছোট প্রাণী শিকার করে। কিন্তু খাদ্যশৃঙ্খলে পরিবর্তন, অন্যান্য প্রজাতির বিলুপ্তি বা সংকটের কারণে তাদের খাদ্য উৎস সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এই সাপটি অত্যন্ত বিষাক্ত হলেও স্বভাবগতভাবে খুব একটা আক্রমণাত্মক নয়। তবে গ্রামীণ এলাকায় শাঁখামুটি সাপ দেখা দিলে অনেক সময় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে তাদের হত্যা করে, যা তাদের সংখ্যা হ্রাসের একটি কারণ। এই সাপের অন্যতম প্রিয় খাদ্য কালাচ এবং চন্দ্রবোড়া। এই সাপ কমে যাওয়ার কারণেই স্বাভাবিকভাবে ঘাটাল মহকুমায় কালাচ ও চন্দ্রবোড়ার উপদ্রব বাড়ছে। সর্পঘাতে মৃত্যু হচ্ছে প্রচুর। এই বছরেই ঘাটাল মহকুমায় কালাচ ও চন্দ্রবোড়ার কামড়ে কমবেশি ১৫জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। -নিজস্ব চিত্র