কর্মীরা আবাস সমীক্ষার তথ্য দিচ্ছেন না, পঞ্চায়েতে তালা ঝোলালেন খোদ প্রধানই
বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, পঞ্চায়েতের কর্মীরা তা নিয়ে কোনও তথ্যই দিচ্ছেন না জনপ্রতিনিধিদের। এই অভিযোগ তুলে শাসক দল পরিচালিত পঞ্চায়েত অফিসে তালা লাগালেন খোদ তৃণমূল প্রধান সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা। ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি ব্লকের অযোধ্যা পঞ্চায়েতে।
বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েতের গেটে তালা লাগিয়ে দেন প্রধান সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা। সমর্থনে ছিল তৃণমূল নেতৃত্বও। প্রায় চার ঘণ্টা তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে জয়েন্ট বিডিও গিয়ে মুশকিল আসান করেন। তারপরেই তালা খোলে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই আবাস যোজনার টাকা বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে না থেকে লোকসভা নির্বাচনের আগেই আবাস যোজনার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষাও। প্রতিদিন সমীক্ষায় যাচ্ছেন পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মীরা।
অযোধ্যা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যদের অভিযোগ, সমীক্ষার ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের কিছুই নাকি জানাননি পঞ্চায়েত কর্মীরা। কোনও বৈঠকও হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়েই সমীক্ষায় যাচ্ছেন তাঁরা। যে তালিকা ধরে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে, সেই তালিকাও নাকি দেওয়া হচ্ছে না জনপ্রতিনিধিদের। এমনকী খোদ প্রধানকেও এব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে এদিন সকালে প্রধান, জনপ্রতিনিধি, অঞ্চলের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রায় ১৫০ তৃণমূল কর্মী পঞ্চায়েতের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। পঞ্চায়েতের প্রধান চম্পা মুড়া বলেন, পুজোর পর সোমবার থেকে পঞ্চায়েত খুলেছে। কিন্তু, পঞ্চায়েত এসে দেখি কোনও কর্মীই নেই। জানতে পারি তাঁরা সমীক্ষায় বের হয়েছেন। অথচ পঞ্চায়েতে বিভিন্ন কাজে আসা মানুষদের ফিরে যেতে হচ্ছে। আমাকেও আগাম কিছু জানাননি। সেক্রেটারির থেকে আবাসের তালিকা চাইলে তিনি ঘুরিয়ে বলছেন, আমাদের তালিকা দেওয়ার নাকি অনুমতি নেই!
সূত্রের খবর, এতেই ক্ষুব্ধ হন প্রধান। বিষয়টি অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতৃত্বকে জানান। বৈঠক হয়। অঞ্চল সভাপতি শিবনাথ সোরেন বলেন, ‘প্রধানের কাজ কি শুধু রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট লিখে দেওয়া? সেটা তো বাড়িতে থেকেও লেখা যায়। সেই কারণে আমরা তালা লাগাতে বাধ্য হয়েছি।’ অঞ্চল যুব সভাপতি পতিতপাবন মুড়া বলেন, ‘পঞ্চায়েত কর্মীরা জনপ্রতিনিধিদের ছাড়াই ফিল্ডে যাচ্ছেন। এলাকা তাঁরা ভালো চেনেন নাকি জনপ্রতিনিধিরা? কেউ তো মাটির রান্নাঘরকে নিজের বাড়ি দেখিয়েও আবাস যোজনার বাড়ি হাতিয়ে নিতে পারেন।’
দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলার পর অবশেষে পঞ্চায়েতে আসেন জয়েন্ট বিডিও। এনিয়ে দীর্ঘক্ষণ বাদানুবাদ চলে। অবশেষে সমস্যার সমাধান হয়। এবার থেকে সমীক্ষায় জনপ্রতিনিধিরাও থাকবেন বলে নির্দেশ দেন জয়েন্ট বিডিও।