স্কুলে যেতে নারাজ, জোর করায় আত্মহত্যা ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ার
বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: স্কুলে যেতে নারাজ। অভিযোগ, বাড়ি থেকে জোর করায় আত্মঘাতী ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি সদরের ঘুঘুডাঙা এলাকায়। মৃত ওই ছাত্রীর ১২ বছরের জন্মদিন ছিল বৃহস্পতিবার। জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর এদিনই তার নিথর দেহ ফেরে বাড়িতে। দেহ ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিস।
মৃত ওই ছাত্রীর বাবা রং মিস্ত্রি। মা গৃহবধূ। তাঁদের একমাত্র সন্তান ছিল ওই ছাত্রী। মেয়েকে হারিয়ে স্বভাবতই শোকে পাথর তাঁরা। এদিন জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের মর্গে মেয়ের দেহ নিতে এসেছিলেন ছাত্রীর বাবা। তিনি বলেন, গত জুলাই মাসে নাগরাকাটা এলাকায় একটি আবাসিক স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছিলাম মেয়েকে। কিন্তু মেয়ে স্কুলে থাকতে চাইত না। কান্নাকাটি করায় বেশ কয়েকবার বাড়ি নিয়ে আসতে হয়। পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু ছুটির পরই আবার স্কুলে যেতে হবে, এনিয়ে একটা আতঙ্ক চেপে বসেছিল মেয়ের মধ্যে। বাড়িতে বেশ কয়েকবার বলেছিল, আর স্কুলে যাবে না। আমরা তাকে বোঝাতাম, পড়াশোনা করতে হবে। কখনও স্কুলে যাওয়ার জন্য কিছুটা জোর করেছি। কিন্তু স্কুল যাওয়ার ভয়ে অতটুকু মেয়ে যে এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে, বুঝতে পারিনি।
মৃত ছাত্রীর বাবা বলেন, বৃহস্পতিবার মেয়ের জন্মদিন ছিল। এবার বাড়ির আশপাশের ছেলেমেয়েদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটবে বলেছিল। আমাকে বলেছিল, জন্মদিনে চিকেন লেগ পিস খাবে। ইলিশ মাছও খেতে চেয়েছিল। বুধবার কাজ সেরে ফেরার পথে শিলিগুড়ি থেকে ইলিশ মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
পরিবার সূত্রে খবর, বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাদা বাড়িতে ওই ছাত্রীটি থাকত। কাছেই তার ঠাকুমা ও দাদুর বাড়ি। বুধবার সন্ধ্যায় সেখানেই গিয়েছিলেন ছাত্রীর মা। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন, দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
ছাত্রীর বাবা জানান, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওর মায়ের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগায়। বড়জোড় দশ মিনিটের জন্য স্ত্রী আমার বাবা-মায়ের কাছে গিয়েছিল। তারই মধ্যে ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলে মেয়ে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় এলাকায় আলোড়ন ছড়িয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বয়সের তুলনায় বেশ ভালোই লম্বা ছিল মেয়েটি।
ছাত্রীর বাবার বক্তব্য, স্কুলে কিছু হয়েছিল কি না জানি না। কেন মেয়ে স্কুলে যেতে চাইত না, সেটাই বুঝতে পারছি না।