নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: মেঘলা আকাশ সঙ্গে ঝড়-বৃষ্টি। কলকাতা সংলগ্ন তিন জেলার মানুষ এক প্রকার ঘরবন্দি থাকলেন ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায়। তবে ঘূর্ণিঝড়রের বড় প্রভাব বৃহস্পতিবার তেমন পড়েনি কোথাও। হুগলিতে দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। যদিও জারি রয়েছে কমলা সতর্কতা। বন্ধ ফেরি চলাচল। দুপুরে জেলার কয়েকটি এলাকায় সামান্য ঝড় হয়েছে। চণ্ডীতলায় গরলগাছার একটি ত্রাণশিবিরে অতিরিক্ত জেলাশাসক অদিতি চৌধুরী ও শ্রীরামপুরের মহকুমা শাসক শম্ভুদীপ সরকার পরিদর্শনে যান। হরিপালে ত্রাণশিবিরে এসেছিলেন কৃষিসচিব ওঙ্কার সিং মিনা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জেলা সদর সহ সর্বত্র ‘ওয়াররুম’ খুলে নজরদারি শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন।
হাওড়ায় আকাশ ছিল মেঘলা। রাস্তায় মানুষ ছিল কম। গ্রামীণ হাওড়ার প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করে মানুষকে সর্তক করা হচ্ছে। গ্রামীণ জেলায় এক হাজারের বেশি লোককে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে জলপথে হুগলি জেলার যোগাযোগ বন্ধ। ফলে নিত্যযাত্রীদের সমস্যা পড়তে হয়েছে। বারাকপুর প্রশাসনিক ভবন সহ প্রতিটি পুরসভায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সাংসদ পার্থ ভৌমিক রাতে নৈহাটি অফিসে থাকছেন। হিঙ্গলগঞ্জে প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে। দুলদুলি ও লেবুখালির ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু জায়গায় ইঞ্জিন চালিত বোট রাখা হয়েছে। বেশ কিছু মানুষ ফ্লাড সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, গাছ কাটা মেশিন, জেনারেটর, অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে। মজুত করা হয়েছে পর্যাপ্ত খাবার। হিঙ্গলগঞ্জ ও সন্দেশখালি একাধিক নদী বাঁধে ধসের জেরে আতঙ্কিত বাসিন্দারা। কিছু জায়গায় স্থানীয়রা বাঁধ মেরামতি শুরু করেছেন। হিঙ্গলগঞ্জের কলাগাছিয়া, কালিন্দী, ডাঁসা নদী থেকে শুরু করে একাধিক নদীবাঁধের অবস্থা খারাপ। এছাড়াও সন্দেশখালির বেতনী নদী, বিদ্যাধরী নদীর একাধিক জায়গায় বাঁধের হাল দেখে চিন্তায় পড়েছেন বাসিন্দারা। সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাত বলেন, সকাল থেকেই প্রশাসনের লোকজন এলাকার নদীবাঁধের খোঁজখবর রাখছে, কোথাও সমস্যা হলেই দ্রুত তা মেরামতি করা হবে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পাঁচটি মহকুমাতে মহকুমা শাসকদের কার্যালয়ে খোলা হয়েছে ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম। ইতিমধ্যেই ২১৭টি ত্রাণ শিবিরে ২৭ হাজার ২২৮ জনকে নিয়ে আসা হয়েছে। কন্ট্রোলরুমে রয়েছেন সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। রেলের বারাসত কারশেডে মালগাড়ির চাকা মোটা শিকল দিয়ে লাইনের সঙ্গে বাঁধা হয়েছে। ডানার দাপটে সকাল থেকে দফায় দফায় হালকা বৃষ্টি হয় উত্তর শহরতলি দক্ষিণ দমদম, বরানগর, বিরাটি, সোদপুরে। সকাল আটটা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজে বের হন সাধারণ মানুষ। পরে ফের দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিপর্যয়ের কোনও খবর নেই। ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় জল কোথাও জমেনি। তবে প্রতিটি পুরসভায় কন্ট্রোল রুম থেকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে।