বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: নগদ নয়, ডিজিটাল। প্রযুক্তিনির্ভর নতুন ভারতে লেনদেনের এটাই ট্রেন্ড। আর তাতে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছে ‘ডিজিটাল প্রতারণা’। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে, সেটা প্রতিদিন বাড়ছে। প্রতারকদের নিত্যনতুন কৌশলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে অনলাইন পেমেন্ট। সরকারি তথ্যই বলছে, বছর খানেক আগেও যেখানে প্রতি মাসে দেশে গড়ে প্রায় দু’লক্ষ মানুষ ডিজিটাল পেমেন্ট করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হতেন, সেই সংখ্যাটা এখন গড়ে প্রায় আড়াই লক্ষ। আগে মাসে প্রতারণার অঙ্ক সীমাবদ্ধ থাকত ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে। সেটা এখন বেড়ে কোনও মাসে ৫০০ কোটিতেও পৌঁছে যাচ্ছে। প্রতারণার জালে পড়েও যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁদের কিন্তু হিসেবে রাখা হয়নি।
এদেশে ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণের চালিকা শক্তি রয়েছে ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া বা এনপিসিআইয়ের হাতে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং অর্থমন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এই সংস্থা। তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে দেশজুড়ে ডিজিটাল পেমেন্টের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি। লেনদেন হয়েছিল ৩৮ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটি টাকার। অর্থাৎ, প্রতিনিয়ত অঙ্কটা আরও ভারী হচ্ছে। আর প্রতারণা? এনপিসিআই বলছে, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে প্রতারিত হয়েছেন ২ লক্ষ ৬৯ হাজার মানুষ। প্রতারণার অঙ্ক ৪৩৫ কোটি। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই অঙ্কটাই ছিল ১৯৫ কোটি টাকা। আর প্রতারণার শিকার? ১ লক্ষ ৫৭ হাজার মানুষ। বৃদ্ধির হার যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এনপিসিআই জানাচ্ছে, ভারতের সীমান্তের মধ্যেই লেনদেনের সময় এই প্রতারণাগুলি হয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক স্তরে কোনও প্রতারণা হলে, তা এই হিসেবের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর্থিক প্রতারণা রুখতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সচেতনতামূলক নানা প্রচার চালায় এনপিসিআই’ও। কিন্তু এসবের পরও ডিজিটাল প্রতারণা যে প্রশ্নের মুখে রয়েছে, তার প্রমাণ দিচ্ছে কেন্দ্রের রিপোর্টই। যে ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে বড়াই করছে কেন্দ্র, তা আসলে কিন্তু ঘোর আর্থিক সঙ্কটে ফেলছে মানুষকে।