শিবপুরে গ্যাংওয়ার, গুলি করে কুপিয়ে খুন জেল ফেরত দুষ্কৃতী
বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: কয়েক বছর ধরেই চলছিল দুই গ্যাংয়ের লুকোচুরি খেলা। একাধিক অপরাধে জেল খাটা ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’কে খুন করতে তক্কে তক্কে ছিল অপর গোষ্ঠী। বুধবার রাতে আচমকাই সামনে এসে গেল ছবিটা। শিবপুর থানা থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে জিটি রোডের উপর এসে দাঁড়াল দু’টি বাইক। নেমেই আব্দুল কাদের ওরফে প্রেমকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাল আততায়ীরা। তারপরই কোপানো। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে প্রথম একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কলকাতার এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় প্রেমের। নিহত ব্যক্তি এলাকায় জেলফেরত দুষ্কৃতী হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৫টি মামলা রয়েছে তার নামে। বছর দেড়েক আগে জামিনে ছাড়া পেয়েছিল সে। খুনের ঘটনায় হাওড়া সিটি পুলিস ইতিমধ্যে নওয়াজ আনসারি ওরফে বুদু নামের এক দুষ্কৃতীকে আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
শিবপুরের পিএম বস্তি এলাকার বাসিন্দা প্রেম গত বুধবার রাত এগারোটা নাগাদ রাস্তার পাশেই তৃণমূলের এক দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও দেখছিল। আচমকা দু’টি বাইকে চেপে প্রেমের সামনে এসে দাঁড়ায় ছ’জন দুষ্কৃতীর একটি দল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রেমকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। বুকে ও কাঁধে গুলি লাগে প্রেমের। এলাকার লোকজন জড়ো হতে না হতেই চম্পট দেয় আততায়ীরা। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন শিবপুর থানার পুলিস ও হাওড়া সিটি পুলিসের পদস্থ কর্তারা। হাওড়া সিটি পুলিসের এক কর্তা বলেন, ‘এই খুনের নেপথ্যে দুষ্কৃতীদের অপর একটি গোষ্ঠী জড়িত। ইতিমধ্যেই নওয়াজ আনসারি ওরফে বুদু নামের এক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আটদিনের জন্য পুলিসি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। বাকিরাও দ্রুত ধরা পড়বে।’ এরপর অবশ্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। বুধবার গভীর রাতে নাকা চেকিংয়ের সময় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘটকপুকুর মোড় থেকে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং তিনটি ম্যাগাজিন বাজেয়াপ্ত করেছিল ভাঙড় থানার পুলিস। তবে কাউকে তারা গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কারণ, রাস্তায় পুলিস দেখেই দুষ্কৃতী স্কুটার ফেলে পালিয়ে যায়। জানা যাচ্ছে, শিবপুরের খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রই পাচারের চেষ্টা চলছিল। হাওড়া পুলিসও তা নিশ্চিত করেছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবপুরের এই গ্যাংওয়ার বহু বছর ধরেই চলছে। এই খুনের পেছনে পিএম বস্তি এলাকারই এক দুষ্কৃতী তৌসিফ ওরফে গ্যাড়ার গ্যাং জড়িত বলে সন্দেহ। বাম আমলে প্রেম ও গ্যাড়া একসঙ্গেই শিবপুর এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করত বলে অভিযোগ। লুটের সামগ্রী বিক্রির দায়িত্ব ছিল প্রেমের। ২০০৮ সাল নাগাদ আলাদা দল তৈরি করে প্রেম। এরপরই শুরু হয় তোলাবাজির এলাকা দখল নিয়ে গ্যাড়া ও প্রেমের গ্রুপের লড়াই। মৃতের পরিবারের দাবি, দিন কয়েক আগেও তার উপর হামলার চেষ্টা হয়েছিল। তখন পুলিসের কাছে ছ’জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, তৌসিফের গ্যাংয়ের কুখ্যাত সদস্য বোড়ে, আখতার এই খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়েছে। মৃত যুবক তৃণমূল কর্মী ছিল বলে এলাকায় কানাঘুষো থাকলেও সেই দাবি নস্যাৎ করেছে শাসক দল। মধ্য হাওড়া তৃণমূল বিধায়ক অরূপ রায় বলেন, ‘অনেকেই এখন তৃণমূল করে। ওই যুবক দলের কোনও পদে ছিল না। যারা প্রকাশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।’