নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর ও হাওড়া: ঘূর্ণিঝড় কখন আসবে? কখন আসবে ডানা? সন্ধ্যায়, মাঝরাতে না ভোরবেলা? এ নিয়ে নানাবিদ গুজবের জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ফাঁকা শিয়ালদহ স্টেশন।
যাত্রীদের অভিযোগ, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেল প্রথমে জানিয়েছিল, রাত আটটার পর শিয়ালদহ শাখায় বন্ধ রাখা হবে ট্রেন। পরে তারা সিদ্ধান্ত পাল্টায়। জানায়, শুধুমাত্র দক্ষিণ এবং বসিরহাট শাখায় রাত আটটা থেকে ট্রেন চলাচল করবে না। বাকি লাইনগুলি স্বাভাবিকই থাকবে। পরপর দেওয়া দুই বিজ্ঞপ্তির জন্যই যাত্রীদের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তারই জেরে লাগাতার গুজব। এবং গুজব-আতঙ্ক সত্যি করে বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার বহু আগে রাত আটটার পূর্বেই শিয়ালদহ স্টেশন শুনশান। ট্রেনের অপেক্ষা না করে জেলার বহু মানুষ কলকাতায় আত্মীয় ও বন্ধুদের বাড়ি থেকে গেলেন। অনেকে মোটা টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া নিয়েও ফিরলেন বাড়ি।
এদিন সবমিলিয়ে তীব্র বিপাকে পড়তে হয় শিয়ালদহ ও হাওড়া ডিভিশনের বহু যাত্রীকে। তড়িঘড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের বহু আগে স্টেশনে পৌঁছনোর জন্য যাত্রীদের তৎপরতা ছিল। যাঁরা তা পারেননি তাঁদের অনেকেই বন্ধু ও পরিচিতদের বাড়ি ও মেসে মাথা গোঁজেন। যাঁরা সেই ব্যবস্থাও করতে পারেননি তাঁরা দুর্যোগ মাথায় গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি পৌঁছন। দূরপাল্লার অনেক ট্রেন বাতিল হওয়ায় অনেকে হাওড়া স্টেশন থেকে বাসেও রওনা দেন।
জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় রেল ট্রেন বাতিলের প্রথম বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। বৃহস্পতিবার ফের নির্দেশিকা জারি করে জানায়, শিয়ালদহ ডিভিশন থেকে শিয়ালদহ দক্ষিণ ও হাসনাবাদ শাখার ট্রেন চলাচল রাত আটটা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভোর চারটে থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত হাওড়া ডিভিশনে ৬৮ লোকাল বাতিল হয়। এছাড়া বহু এক্সপ্রেস ট্রেনও বাতিল হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সমাজমাধ্যমে, বাসে-ট্রেনে নিত্যযাত্রীদের আলোচনায় ট্রেন বাতিলের বিষয়টি ঘুরেফিরে আসতেই থাকে। ডালহৌসির এক বেসরকারি সংস্থার সেলস বিভাগে কাজ করা কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘গতকাল রাতে অফিসে জানিয়ে রেখেছিলাম আজ ছ’টাতেই ছুটি দিতে হবে।’ মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ তমাল কুণ্ডু বলেন, ‘ডানা নিয়ে অফিসের কর্তারাও আতঙ্কে। তাই সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে কাজ গুছিয়ে বাড়ি ফিরতে বলেছেন।’ তবে সন্ধ্যার আগে কাজ গুছিয়ে বাড়ি ফেরা সম্ভব নয় বড় বাজারের একটি বাণিজ্যিক সংস্থার কর্মী মৃণাল দাসের। তাঁর বাড়ি বসিরহাটের মালতিপুর। তিনি বলেন, ‘রাত আটটার ট্রেন ধরতে পারব না। তাই বেলঘরিয়ায় এক বন্ধুর মেসে রাতে থাকব।’ এর পাশাপাশি বনগাঁ ও নৈহাটি রুটের যাত্রীরাও এদিন ট্রেন নিয়ে আশঙ্কায় রাত আটটার অনেক আগেই স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই হাওড়া থেকে ভুবনেশ্বর জনশতাব্দী এক্সপ্রেস, দীঘা কাণ্ডারী এক্সপ্রেস, হাওড়া-ভদ্রক এক্সপ্রেস, তিরুচিরাপল্লি এক্সপ্রেস, হাওড়া-চেন্নাই মেলের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল হয়। ফলে হাওড়া স্টেশনে দিনভর যাত্রী দুর্ভোগের চিত্র নজরে এসেছে। ভদ্রকের বাসিন্দা সঞ্জয় বারিক কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। তিনি বলেন, ‘ট্রেন বাতিল হওয়ায় ভীষণ সমস্যায় পড়েছি। জানি না বাসে করে ফিরতে পারব কি না।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই কর্ড ও মেইন লাইনে বর্ধমানগামী লোকাল ট্রেনগুলোতে ভিড় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি ছিল। নিত্যযাত্রীরা বলেন, ‘কাজ থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসেছি। ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছে যেতে পারলে হয়।’ আজ, শুক্রবার ট্রেন ঠিকঠাক চলাচল করবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কায় তাঁরা। নিজস্ব চিত্র