মাছ ধরার জাল দিয়ে মোড়া ঘরের ছাউনি, চাপানো হয়েছে ভারী বস্তা
বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ, ২৪ পরগনা: দৃশ্য ১: উথালপাথাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে কংক্রিটের বাঁধের উপর। সঙ্গে চলছে দমকা হওয়া। নামখানা ব্লকের ফ্রেজরগঞ্জ গ্রামের অমরাবতী গ্রামের একেবারে ধারে সমুদ্র। তার তীরেই বসতি। বাড়ির সামনে এক মহিলা দড়ি দিয়ে ছাউনি বাঁধছেন। তার উপর আবার বালির বস্তা চাপিয়ে সেটাও শক্তপোক্ত ভাবে বেঁধে ফেললেন।
দৃশ্য ২: খানিকটা দূরে আরও কয়েকটি বাড়িতে দেখা গেল, টালি ও অ্যাসবেস্টসের চাল শালের খুঁটি, মোটা মোটা বাঁশ রেখে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আরেকটি জায়গায় মাছ ধরার একাধিক জাল দিয়ে ছাদ ঘিরে সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছেন বাড়ির কর্তা। নামখানা, কাকদ্বীপ জুড়ে এইভাবেই বাড়তি সুরক্ষা নিচ্ছেন মানুষজন। তাঁদের একটাই কথা, পরপর ঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খোয়া গিয়েছে অনেক সম্পত্তি। পড়ে আছে শুধু বাড়িটাই। এটাও চলে গেলে আর মাথা গোঁজার জায়গা থাকবে না। তাই যেন তেন প্রকারেণ ঘর বাঁচাতে নেমে পড়েছেন গ্রামবাসীরা। ফ্রেজারগঞ্জে অমরাবতী গ্রামের বাসিন্দা কাজল নাইয়া বলেন, বুলবুল, ফণী, উম-পুন দেখেছি। আর কত ঝড় আসবে? আর কত ক্ষতি করবে? বাড়িটাই শুধু বেঁচে রয়েছে। আগেরবার দড়ি দিয়ে বেঁধেছিলাম তাও উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল সব। তাই এবার বালির বস্তাও রেখেছি। রত্না বালা দাস নামে আরেক মহিলার কথায়, ত্রিপল দিয়ে মোড়া চাল একের পর এক জাল দিয়ে ঢাকা হয়েছে। প্রতি বার ঝড় এসে সব উড়িয়ে নিয়ে যায়। তাই এবারে মীন ধরার তিন চারটি জাল দিয়ে ছাদ ঢেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছি। তাঁর আক্ষেপ, প্রকৃতির সঙ্গে কী আর পেরে ওঠে যায়! তাও যতটা সম্ভব বাড়িঘর রক্ষা করার চেষ্টা করা।
ঘর বাঁচানোর লড়াইয়ে নামলেও দুর্যোগে সেটা ছেড়ে অন্যত্র যেতে নারাজ পরিবারগুলি। তাঁরা বলছেন, আবারও একটি বিনিদ্র রাত কাটাতে হবে। ঠাকুরের নাম নিয়েই রাত জাগব সবাই। তবে এত বিপদের মুখে থেকেও তাঁরা ত্রাণ শিবিরে যেতে রাজি নন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, বাড়িঘর রক্ষা করতে হবে তো। তাই এখানেই থাকব। বিভিন্ন রাস্তাঘাটে দোকানঘর, নদীতে ট্রলার সব বাঁশের খুঁটি পুঁতে বেঁধে রাখা হয়েছে।