সংবাদদাতা, গঙ্গাসাগর: মঙ্গলবার রাত থেকেই তাঁরা নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার মাইকিং শুনেছেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে অসহায় অবস্থায় ছোট্ট ঝুপরিতেই শুয়েছিলেন ৯৪ বছর বয়সি মনোরঞ্জন হালদার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ৭৫ বছরের স্ত্রী আঙুর হালদার ও দশ বছরের নাতি সুরজিৎ। বুধবার রাতে একমুঠো চাল ফুটিয়ে খেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেননি। কারণ গঙ্গাসাগরের সমুদ্র সৈকত তখন জনশূন্য। সমুদ্রের গর্জন ও ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। সমুদ্র থেকে ২০০ ফুট দূরে ত্রিপল ঢাকা ঝুপড়িতে নাতিকে ঘুম পাড়িয়ে রাত জেগে বসেছিলেন দাদু ও দিদা। অসহায় দম্পতির ভরসা তখন শুধুই ঈশ্বর।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই গঙ্গাসাগরে বাড়তে থাকে ঝড়ের দাপট। উনোন জ্বলেনি হালদার পরিবারে। রাতের থেকে যাওয়া ভাত নাতিকে আলু মেখে খাইয়ে দিয়েছিলেন। বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী একমুঠো মুড়ি খেয়ে ভাগ্যের হাতে জীবন সঁপে দিয়ে বসেছিলেন। ইচ্ছে থাকলেও ফ্লাড সেল্টারে যেতে পারছিলেন না তাঁরা। অসুস্থ স্বামীর পাশে ঠায় বসেছিলেন আঙুরদেবী।
এক চিলতে ঝুপরির দরজার সামনে হঠাৎ পুলিসের চিৎকার। ছুটে ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে ছোট্ট সুরজিৎ। এরপরই গঙ্গাসাগর কোস্টাল থানার পুলিস আধিকারিকরা বুঝতে পারেন, ঘরের ভিতরে আরও কয়েকজন রয়েছেন। কিছুক্ষণ পর অসুস্থ মনোরঞ্জনকে দেখা যায়। পুলিসকে দেখেই তিনি চাপা কণ্ঠে বলে ওঠেন, ‘আমাদের নিয়ে চলুন।’ এদিন দুপুর একটা নাগাদ তাঁদের উদ্ধার করে একটি ভ্যানে ফ্লাড শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। মনোরঞ্জনবাবু বলেন, ‘সারারাত সমুদ্রের গর্জন শুনেছি। ভেবেছিলাম বাড়ি সহ সবাইকে গিলে খাবে। এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।’ পুলিসের হাত ধরে প্রায় কেঁদেই ফেললেন তিনি। এদিকে, গঙ্গাসাগরে বাবার বাৎসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের কাজ করতে এসে আটকে পড়লেন তিনজন। বাধ্য হয়েই তাঁদের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে হল।
বাসন্তীর বাসিন্দা সুজিত মণ্ডল বুধবার দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গঙ্গাসাগরে এসেছিলেন বাবার শ্রাদ্ধ করতে। গঙ্গাসাগরে এসে তাঁরা জানতে পারেন, দুপুর দুটো থেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে মুড়িগঙ্গা নদীর ভেসেল পরিষেবা। এমনকী বৃহস্পতি ও শুক্রবারও এই পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। অগত্যা অপেক্ষা ছাড়া কোনও উপায় নেই তিনজনের। নিজস্ব চিত্র