• দিনভর মেঘলা, নিশুত রাতে সাইক্লোন হানা
    এই সময় | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়: বাংলার কান ঘেঁষে যে ওডিশায় ল্যান্ডফল করবে দানা, ফলে বাংলা যে বড় দুর্যোগের হাত থেকে রেহাই পেতে চলেছে— সে কথা বুধবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন আবহবিদরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় দানা যত বঙ্গোপসাগরের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক বরাবর ওডিশা উপকূলের দিকে যত এগিয়েছে, সেই অনুপাতে ঝড়-বৃষ্টি অন্তত হয়নি কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। আকাশ মেঘলা ছিল। কখনও ঝিরঝিরে, কখনও হালকা বৃষ্টি চলেছে কলকাতা ও আশপাশের বিভিন্ন প্রান্তে।ঘূর্ণিঝড় ল্যান্ডফল করার দিন সকাল থেকেই আকাশের মুখভার এবং মুষলধারায় বৃষ্টি— এই লক্ষণ খুব ভালো চেনে দক্ষিণবঙ্গ। ২০০৯-এ আয়লা বা ২০২০-তে উম্পুন ল্যান্ডফল করার আগে এমন ঘটনাই তো ঘটেছিল। দানার ক্ষেত্রে অবশ্য তেমনটা হয়নি। টানা ঝোড়ো হাওয়া বা নাগাড়ে বৃষ্টি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত হয়নি। এ দিন সকাল থেকেই কিছুক্ষণ অন্তর আলিপুর হাওয়া অফিস দানার আপডেট দিয়ে স্পেশ্যাল বুলেটিন প্রকাশ করছিল।

    সেই আপডেট অনুযায়ী এ দিন দুপুর থেকে তীব্র ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার বেগে ওডিশা উপকূল লক্ষ্য করে এগোচ্ছিল। স্থানীয়দের উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে পারাদ্বীপ ও ধামারা থেকে তার দূরত্বও ক্রমশ কমছিল। রাত সাড়ে ৮টায় দানা পারাদ্বীপ থেকে ৯০ কিলোমিটার এবং ধামারা থেকে ১১০ কিমি দূরে অবস্থান করছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর, পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা-শঙ্করপুর-তাজপুরের উপকূল এলাকায় হাওয়ার গতিবেগ কিছুটা বেড়েছে, কোথাও ঝিরঝিরে বৃষ্টিও চলেছে। শেষ পর্যন্ত বাংলার জন্য ‘খারাপ’ কিছু হয়নি।

    আলিপুর হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস মিলিয়ে দিয়েই বাংলাকে কিছুটা ডান দিকে রেখে ওডিশার পথেই রওনা দেয় ‘দানা’। তীব্র ঘূর্ণিঝড় এবং তার জেরে দুর্যোগের হাত থেকে এ যাত্রা বাংলা রক্ষা পেয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু কোন দৈববলে?

    কেন শেষ পর্যন্ত বাংলার দিকে না এগিয়ে বেশ কিছুটা বাঁ দিকে সরে ওডিশাকে ল্যান্ডফলের জন্য বেছে নিল ‘দানা’? এর নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির (আইআইটিএম) প্রাক্তন সাইক্লোন মডেল নির্মাতা এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘বাংলার খুব কাছেই মাটি থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার উপরে একটি বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত অবস্থান করছে। উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে মুখ করে ঘোরে। কিন্তু বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে। এই কারণেই একে অন্যকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। বাংলার উপরে ওই বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত না থাকলে ঘূর্ণিঝড়ের এ দিকে চলে আসার সম্ভাবনা অনেকটাই যে বেশি থাকত, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।’

    অন্য দিকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্র গোয়েঙ্কার বক্তব্য, ‘যদি ২৪ অক্টোবরের পরিবর্তে দানা আরও একমাস পরে তৈরি হতো, তা হলে হয়তো পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত। এ বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বিদায়পর্ব শুরু হয়েছে। ফলে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা শুকনো এবং ঠান্ডা পশ্চিমা বাতাস অত্যন্ত দুর্বল। কয়েক দিনের মধ্যেই ওই বাতাস শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সেই সময়ে হলে বাতাসের চাপে ঘূর্ণিঝড়ের ট্র্যাজেক্টরি বাংলার দিকে অনেকটাই সরে আসত। নিতান্ত কপালজোরে সেটা হয়নি।’
  • Link to this news (এই সময়)