বাংলাদেশ থেকে সোনার বিস্কুট কোচবিহার হয়ে যাচ্ছে সারা দেশে
বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: সোনা পাচারের ‘সেফ জোন’ কোচবিহার! সোনা পাচার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে তারা কয়েকজন ক্যারিয়ারকে পাকড়াও করেছেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশ থেকে চোরা পথে কোচবিহারে ঢুকছে সোনার বিস্কুট। তা শিলিগুড়ি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান করা হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের নজরদারি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলির মধ্যে কোচবিহার একটি। জেলার পাঁচটি মহকুমা। যারমধ্যে কোচবিহার সদর বাদ দিয়ে বাকি চারটি মহকুমাই বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ঘেরা। সেগুলি দিনহাটা, মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ ও মেখলিগঞ্জ। সংশ্লিষ্ট মহকুমাগুলিতেই জাল বিস্তার করেছে সোনা পাচার সিন্ডিকেট। সোনা পাচারের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে। যা গোয়েন্দাদের কাছে মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সংশ্লিষ্ট মহকুমাগুলির বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অনেক এলাকা এখনও উন্মুক্ত। কাঁটাতারের বেড়া নেই। আবার সীমান্তে কিছু জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নদী। কোথাও নদীর ওপারে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের পাশেই অবস্থিত ভারতীয় গ্রাম। কোথাও আবার কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে রয়েছে চাষের জমি। এমন ভৌগোলিক অবস্থানের জেরে ইদানিং সংশ্লিষ্ট সীমান্তগুলিতে সক্রিয় সোনা পাচারকারীরা। বিশেষত দিনহাটার গীতালদহ সীমান্তে পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বেশি। কেউ নদীতে মাছ ধরার, আবার কেউ জমিতে চাষাবাদের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে আনছে সোনার বিস্কুট। এর নেপথ্যে আন্তর্জাতিক সোনা পাচার সিন্ডিকেটের সংস্রব রয়েছে বলেই গোয়েন্দাদের ধারণা।
গোয়েন্দারা বলেন, একদা বিদেশি সোনার বিস্কুট মায়ানমার থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত হয়ে সড়ক কিংবা ট্রেন পথে আসত শিলিগুড়িতে। এই রুটের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন সময় অসম থেকে আসা বিভিন্ন ট্রেনে, বাসে ও লরিতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় সোনার বিস্কুট। সম্ভবত গোয়েন্দাদের নজর এড়াতেই ইদানিং পাচারকারীরা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কোচবিহার জেলার কিছু মহকুমাকে ‘সেফ জোন’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার জলপাইগুড়ির ২৭ নম্বর জাতীয় সড়কের হুসলুরডাঙা টোল প্লাজার কাছে বাসে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার সোনার বিস্কুট সহ অসমের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ (ডিআরআই)। এর আগে ১ মে ডিআরআই প্রায় ১ কেজি ৬২৪ গ্রাম সোনা সহ কোচবিহারের গীতালদহের এক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতের দেওয়া তথ্য অনুসারে কয়েকদিন আগেই গীতালদহের আরএক অভিযুক্তকে পাকড়াও করা হয়। ডিআরআইয়ের আইনজীবী রতন বণিক বলেন, ইদানিং বাংলাদেশ থেকে সোনার বিস্কুট কোচবিহার সীমান্ত দিয়ে এপারে আসছে। বিভিন্ন সময় ধৃত পাচারকারীদের কাছ থেকেই গোয়েন্দারা এই তথ্য পেয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
এই অবস্থায় সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, জওয়ানদের নজরদারির অভাবেই সোনা পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিএসএফ অবশ্য উদাসীনতার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, সীমান্তে জওয়ানরা সর্বদা সতর্ক রয়েছে। তারাও সোনা পাচার রুখছে।