• বিপজ্জনক বাড়িতে নোটিস পাঠালেও নড়ছেন না বাসিন্দারা
    আনন্দবাজার | ২৫ অক্টোবর ২০২৪
  • জরাজীর্ণ তেতলা বাড়ি। দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে দাঁড়িয়ে এক পুলিশকর্মী। কাগজ হাতে বলে চলেছেন, ‘‘আর কখন বাড়ি ছাড়বেন? কাল থেকে তো শুধু ‘যাচ্ছি যাচ্ছি’ বলে চলেছেন। আপনারা কি বাড়ি ভেঙে পড়ার অপেক্ষা করছেন?’’

    ঘটনাস্থল, কলকাতা পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আহিরীটোলা স্ট্রিট। বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘বিপজ্জনক’ ওই বাড়িটির সামনে থেকে পুলিশ সরতেই বাসিন্দাদের অধিকাংশ জানালেন, রাতে এই বাড়িতেই তাঁরা থাকবেন। দোতলার ঘরের সামনে বারান্দায় রান্না করতে করতেই এক জন বলে উঠলেন, ‘‘শুধু শুধু ভয় দেখানো। এই বাড়িতে আমপান কাটিয়ে দিলাম। কিচ্ছু হল না। ওড়িশার দিকে যাওয়া ঝড়ে নাকি কলকাতার বাড়ি ভেঙে পড়বে! কোথাও যাব না, এখানেই থাকব।’’ তেতলা বাড়ির বাকি ভাড়াটেদের কয়েক জন অবশ্য জানালেন, এ দিন সন্ধ্যার পরে বাড়ি ছেড়ে যাবেন তাঁরা। অন্য এক ভাড়াটে শুক্লা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কেউ যায়, কেউ যায় না। ইচ্ছে মতো। এখানে কেউ জোর করে না।’’

    এ দিন দুপুরের পর থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র জেরে মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যেই শহরের একাধিক বিপজ্জনক বাড়ি ঘুরে দেখা গেল, ঝড় নিয়ে বাসিন্দাদের কারও হেলদোল বিশেষ নেই। এমনকি, পুরসভার নোটিসের পরেও অধিকাংশই ঘর ছাড়তে নারাজ। ঝড়ের বিপদ নিয়ে প্রশ্ন করতেই কেউ বললেন, ‘‘দেখা যাবে।’’ কেউ আবার পাল্টা প্রশ্ন শোনালেন, ‘‘কয়েক মাস আগেও তো একই ভাবে বাড়ি ছাড়ার কথা বলেছিল। কিছু হয়েছিল কি?’’ বিকেলে বিডন স্ট্রিটের এমনই একটি বিপজ্জনক বাড়ির প্রতিবেশী আনন্দিতা মৈত্র বললেন, ‘‘বাড়ি কেউ সংস্কারও করে না, খালিও করে না। এমন বাড়ির প্রতিবেশী হয়ে আমাদেরও প্রাণ হাতে করে থাকতে হয়। কখন ভেঙে পড়বে, জানা নেই।’’

    তেতলা সেই বাড়ির অন্দরে দেখা গেল, প্রতিটি ঘরেই রয়েছেন বাসিন্দারা। কেউ তাস খেলছেন, কেউ টিভিতে ঝড়ের খবর শুনতে ব্যস্ত। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এক বাসিন্দা বিপ্লব সিংহ বললেন, ‘‘কেন ছাড়ব? আমরা তো নোটিস পাইনি।’’ যদিও একটু খোঁজ নিতেই জানা গেল, বুধবার পুরসভার তরফে কয়েক জন বাড়ি ছাড়ার কথা বলতে এলেও তাঁদের ভিতরে ঢুকতে না দিয়েই ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

    কলকাতায় চার হাজারের বেশি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিপদের আশঙ্কায় এরই মধ্যে প্রায় ১৫০টি অতি বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নোটিস দেয় কলকাতা পুরসভা। বরো ধরে ধরে প্রতিটি ওয়ার্ড এলাকার পুরনো এবং বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প হিসাবে এলাকার কমিউনিটি হল অথবা ক্লাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ফুলবাগান, সিঁথি, কুমোরটুলি পার্ক-সহ একাধিক এলাকার এমন বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের পুরসভার তরফে নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে খবর। কিন্তু অধিকাংশই এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বিকল্প আস্তানায় যাননি। পুলিশি ধমকে কেউ কেউ বিকেলে বাড়ি ছাড়লেও রাতে ফিরে আসেন। পুরসভার এক কর্তা বললেন, ‘‘এটা পুরনো রোগ। তাই নোটিস দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করেও কয়েক ঘণ্টার জন্য বাড়ি থেকে সরানো যায় না। সে ক্ষেত্রে তো আর লাঠি হাতে নামতে পারি না।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)