২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুল ছিল বলে দাবি করা হয়। এনিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের কথা বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে সেই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল সেটা বজায় থাকবে বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এমনকী সেই কমিটিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এনিয়ে তাঁদের পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রশ্ন ভুলের বিষয়টি যাচাই করার জন্য গঠিত বিশেষ কমিটিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থাকলে অসুবিধা কোথায়?
সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে। এদিকে মূল মামলাকারী দাবি করেছিলেন, ২০১৭ সালের টেট পরীক্ষায় সব মিলিয়ে ২৩টি ভুল প্রশ্ন ছিল। ২০২২ সালের টেট পরীক্ষায় সব মিলিয়ে ভুল প্রশ্ন ছিল ২৪টি। এরপর হাইকোর্টে সেই মামলার রায়ে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রথম টেটের প্রশ্ন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় খতিয়ে দেখবে। এরপর ২০২২ সালের টেটের প্রশ্ন খতিয়ে দেখবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এরপর মামলা যায় ডিভিশন বেঞ্চে।
সেখানে অবশ্য় এই বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়ে নয়া নির্দেশ আসে। সেখানে বলা হয়েছিল, এই প্রশ্নপত্র খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করা হবে। সেই কমিটিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের থাকা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন মামলাকারীরা। তাদের দাবি ছিল বাকি দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকুক। কিন্তু কোনওভাবেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের থাকা যাবে না।
তবে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে কেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন না? সেখানে বলা হয়েছে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকবে। সেখানে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরেই মামলা তুলে নেন মামলাকারীরা। সেক্ষেত্রে আপাতত সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টে। অর্থাৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরাও এই প্রশ্নপত্রের ভুল সংক্রান্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নেবেন।
এদিকে এই প্রশ্ন ভুল নিয়ে আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল হাইকোর্ট। ২০২২ সালের টেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুরি ভুরি ভুল থাকার অভিযোগকে ঘিরে মামলা হয়েছিল। আর এই এত ভুলের জেরে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট। ১৫০টি প্রশ্নের মধ্য়ে কেন এতগুলি ভুল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল হাইকোর্ট। অন্তত ২৩টি ক্ষেত্রে ভুল প্রশ্ন ছিল বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এত ভুল হল কেন?
প্রথম দিকে বলা হচ্ছিল ১৩টি প্রশ্নে ভুল আছে। এরপর বলা হল ১৩ নয় ১৫টি প্রশ্নে ভুল আছে। এরপর সেটি বেড়ে ২১টি হয়ে যায়। সবশেষে এখন নতুন করে যে মামলা হয়েছে তাতে প্রশ্ন ভুলের সংখ্য়া বলা হচ্ছে ২৩টি। সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে ১৫০টি প্রশ্নপত্র। তার মধ্যে ২৩টি প্রশ্নপত্রই ভুল। এটা কী করে সম্ভব? কেন প্রশ্ন তৈরির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি? সেই প্রশ্নও উঠছে। এদিকে এই প্রশ্নের উপরই হাজার হাজার কর্মপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সেক্ষেত্রে কেন এই ধরনের প্রশ্ন তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি প্রশ্ন তা নিয়েও।