দীঘা নিরাপদই, সমুদ্রের রূপ দেখতে উৎসাহী পর্যটকদের বাধা পুলিসের
বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, কাঁথি: সাইক্লোন ‘ডানা’ সৈকতশহর দীঘার তেমন ক্ষয়ক্ষতি করেনি। দীঘার পরিস্থিতি এবং সমুদ্রের অশান্ত রূপ দেখতে শুক্রবার সকাল থেকেই উৎসাহী পর্যটকের ভিড় জমতে থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণপিপাসু লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। সমুদ্রের ধারে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা এখনও জারি রয়েছে। যদিও তা সত্ত্বেও অত্যুৎসাহী পর্যটকদের রোখা যায়নি। এর আগে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া এবং পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি চলতে থাকে। সমুদ্রও ব্যাপক উত্তাল ছিল। কোথাও কোথাও গার্ডওয়াল টপকে জল সৈকতের রাস্তায় চলে আসে। তবে জল থইথই হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। শুক্রবার সকালে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়। তবে দিনভরই ছিল মেঘলা আকাশ। মাঝেমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে থাকে। এদিন দীঘার পাশাপাশি মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুর সর্বত্রই পরিস্থিতি একই ছিল। ছিল কড়া পুলিসি নজরদারি। ফলে দীঘা সহ বাকি পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে উৎসাহী পর্যটকদের একাংশ ও স্থানীয় লোকজনের আনাগোনা ছাড়া সেভাবে ভিড় কোথাও লক্ষ্য করা যায়নি।
দীঘায় ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই উৎসাহী পর্যটকরা দু’চার জন করে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়তেই ওল্ড দীঘা থেকে নিউ দীঘায় সেই সংখ্যাটা একটু একটু করে বাড়তে থাকে। উত্তাল সমুদ্রকে পিছনে রেখে পর্যটকদের কেউ কেউ সেলফি তুলতে থাকেন। ভ্লগ করার জন্য আসা যুবক-যুবতীদেরও আনাগোনা জমতে থাকে। অনেকে গার্ডওয়ালে বসে সমুদ্রের ভয়ঙ্কর রূপ উপভোগ করেন। বুধবার প্রশাসনের তরফে হোটেলগুলি খালি করার নির্দেশ থাকলেও অনেক হোটেলে পর্যটকরা থেকে গিয়েছিলেন। সকাল থেকে সৈকত ফাঁকা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই পর্যটকরাই ভিড় জমাতে শুরু করেন। যদিও বা সমুদ্রের ধারে যাওয়ার প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা আজ, শনিবার পর্যন্ত জারি রয়েছে। তাই পুলিস-প্রশাসন চূড়ান্ত সতর্ক রয়েছে। নজরদারির দায়িত্বে থাকা পুলিসকর্মী ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের কর্মীরা উৎসাহী পর্যটকদের বাধা দেন। পর্যটকরা যাতে হু হু করে ঢুকে পড়তে না পারেন, তার জন্য ঘাটগুলির কাছে বাঁশ দিয়ে আগেই ব্যারিকেড করা রয়েছে। গার্ডওয়ালের কাছে দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া রয়েছে। উৎসাহী পর্যটকদের রুখবে কে? অনেকেই বিভিন্ন দিক দিয়ে ঢুকে সমুদ্রের ধারে চলে যান। ভিড় বাড়ছে দেখে সৈকতে টহলরত পুলিসকর্মী ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা তাঁদের সরিয়ে দেন। তাঁদের অনেকে হতাশ হয়ে চলে যান। এভাবেই দিনভর চলতে থাকে। তবে বিকেলের দিকে একটু ভিড় বাড়ে। শুধু তাই নয়, দুপুরে ওল্ড দীঘার সি-হক ঘোলা ঘাটে একজন পর্যটক সকলের নজর এড়িয়ে সমুদ্রেই নেমে গিয়েছিলেন। পুলিসকর্মীদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যান তিনি। কলকাতা থেকে আসা পর্যটক গৌরী মণ্ডল সহ আরও কয়েকজন বলছেন, আমাদের তো বৃহস্পতিবারই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমুদ্রের ভয়ঙ্কর রূপ তো সবসময় দেখা যায় না। আমরা সেটা দেখার জন্যই থেকে গিয়েছিলাম। এদিকে ‘ডানার’ জন্য সাময়িক হোটেল বুকিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দীঘায়। বুকিং এবার শুরু হচ্ছে। দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, শুক্রবার থেকে ফের বুকিং নেওয়া শুরু হয়েছে। শনিবার থেকেই পর্যটকরা হোটেলে এসে থাকতে পারবেন। দীঘা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। উপকূলের থানাগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) আবু নুর হোসেন বলেন, সমগ্র পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের ধারে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞাও উঠে যাবে। আবার স্নানে নামতে পারবেন পর্যটকরা।