সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: সামনেই আলোর উৎসব দীপাবলি। চারিদিক আলোয় ঝলমলে হয়ে উঠবে। কিন্ত, তার আগে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ডানার’ প্রভাবে একটানা বৃষ্টিতে মাটির প্রদীপ রোদে শুকাতে না পারায় কৃষ্ণগঞ্জের আদিত্যপুরের কুমোরদের মাথায় হাত পড়েছে। এমনিতে আলোর উৎসব আধুনিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটির প্রদীপের চল ক্রমশ কমছে। তার বদলে বাজার দখল করেছে বিভিন্ন রকমের এলইডি সহ অত্যাধুনিক নানা রঙিন আলো। এখন সেই উজ্জ্বল আলোতেই সেজে উঠছে ঘরবাড়ি। আর ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে দীপাবলীর মাটির প্রদীপের ঐতিহ্য।
এই অবস্থায় কৃষ্ণগঞ্জের আদিত্যপুর কুমোরপাড়ায় বাপ ঠাকুরদার আমল থেকে প্রদীপ তৈরির কাজ করে আসা মানুষগুলির ঘরে অন্ধকারের মতো অবস্থা। অথচ একটা সময় ছিল দীপাবলির মাস তিনেক আগে থেকেই নির্মল পাল, গোপাল পাল, নিত্যানন্দ পাল, যমুনা পাল, সন্তোষ পালদের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠত। দীপাবলির আগে হাজার হাজার মাটির প্রদীপ কিনে নিয়ে নিয়ে যেত দোকানিরা। তাতে দুটো পয়সা ঘরে আসত। এখন কুমোরপাড়ায় কান পাতলেই শোনা যায় তাঁদের সন্তানরা আর এই পেশায় আসতে চাইছে না। সকলে পড়াশোনা করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। পালেরা বলেন, এখন মাটির দাম বেড়েছে। বেড়েছে রঙের দামও। এই অবস্থার মধ্যেও বাপ ঠাকুরদার কৌলিন্য ধরে রাখতে কিছু মাটির প্রদীপ তৈরি করা হয়। কিন্তু ডানার প্রভাবে একটানা বৃষ্টি হওয়ায় সেই প্রদীপ শুকানো যাচ্ছে না। তাতে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছি। বর্তমানে কমতে কমতে কৃষ্ণগঞ্জের আদিত্যপুর পালপাড়ায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার এই প্রদীপ তৈরি করেন। মাটির প্রদীপ ডাইসে ফেলে করা হয়। মুখ কাটতে হয় বলে এতে সময় একটু বেশি লাগে। তবে যারা এই কাজে দক্ষ তারা মাটির প্রদীপ চাকে ফেলে বা হাতেও তৈরি করে। জানা গিয়েছে, ছোট সাইজের মাটির প্রদীপ পাইকারি ১০০ পিসের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এই প্রদীপ প্রতি পিস খুচরা বিক্রি হয় ১ থেকে দেড় টাকায়। এর উপরের সাইজের দাম পাইকারি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এর থেকে একটু বড় সাইজের প্রদীপের দাম পাইকারি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। দশকর্মার দোকানে এই প্রদীপ বিক্রি হয়। কালীপুজোর এক মাস আগে থেকেই এই প্রদীপ তৈরির কাজ শুরু করেন কুমোররা। রঙিন আলোর উৎসবে আধুনিকতা থাকলেও, এই পটুয়াপাড়ার মাটির প্রদীপ তৈরি করা মানুষগুলো এখনও সেই ভাবে নিজেদের বদলাতে পারেননি। তাই নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে অল্প লাভে কম সংখ্যক মাটির প্রদীপ এখনও তাঁরা তৈরি করেন।