পূর্ব মেদিনীপুরে ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫০টি কাঁচাবাড়ি, বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা
বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: আশঙ্কামতোই ‘ডানা’-র প্রভাব পড়ল জেলায়। তবে দাপট তেমন জোড়ালো না হওয়ায় এযাত্রায় কার্যত রক্ষা পেল পূর্ব মেদিনীপুর। যদিও তার মধ্যেই প্রায় সাড়ে তিনশো কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে। ভেঙেছে বহু গাছ। ভেঙেছে ৪০টির বেশি বিদ্যুতের খুঁটি। ১৫টি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ১৯কিলোমিটার বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। কাঁথি মহকুমা এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এছাড়াও হলদিয়া, তমলুক ও এগরা মহকুমা থেকেও ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট এসেছে। শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন ব্লকে কাঁচাবাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর আসতে শুরু করে। আড়াইশোর বেশি গাছ ভেঙে পড়েছে। এদিন সকালে খাদ্যদপ্তরের সচিব পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি তমলুকে জেলাশাসক অফিসে আসেন। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়। দুপুর ১টায় মুখ্যসচিব সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স সারেন। সেখানে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট তুলে ধরে জেলা প্রশাসন।
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, প্রায় ৩৫০ কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি, সেচ, বিদ্যুৎ বণ্টন সহ বেশকিছু ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট এসেছে।বৃহস্পতিবার রাতে সাইক্লোন আছড়ে পড়ার আগে রামনগর-১ ব্লকের উত্তর জলধা গ্রামের সরস্বতী নায়েক চাঁদপুর মাল্টি পারপাস সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেন। সকালে বাড়ি ফিরে দেখেন, বাড়ির উপর বনদপ্তরের গাছ ভেঙে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ি। ওই ব্লকের দহদয়া গ্রামের শ্রীহরি জানা সাত মাস আগে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। ছ’মাসের ছেলেকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন শ্রীহরির স্ত্রী বিনুরানি জানা। চারিদিকে টিন ঘেরা অ্যাসবেসটসের বাড়ি। রাতে সাইক্লোন আছড়ে পড়ার মুহূর্তে অ্যাসবেসটসের ছাউনি উড়িয়ে নিয়ে যায়। ওই অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে সারারাত বাড়িতেই কাটান বিনুরানি। সকাল থেকেই নাগাড়ে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা সংগ্রহ করতে প্রশাসন সমস্যায় পড়ে। দুপুর পর্যন্ত রামনগর-১ব্লকে ৬২টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার রিপোর্ট সংগ্রহ করেন বিডিও পূজা দেবনাথ। সেই রিপোর্ট জেলায় পাঠানো হয়। সমুদ্রের ধারে আর এক ব্লক রামনগর-২তে ৭০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার বিডিও জেলায় রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। এছাড়াও কাঁথি-১, দেশপ্রাণ, খেজুরি-১ ও ২সহ বিভিন্ন ব্লক থেকে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার রিপোর্ট এসেছে।
শুধু বাড়ি নয়, সাইক্লোনে বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। ঝড়ে এই জেলায় ৪০টি ইলেক্ট্রিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এছাড়া ১৫টি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে উপকূলবর্তী বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। সকাল থেকে নাগাড়ে বৃষ্টিতে বিঘ্নিত এলাকায় পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজ ব্যাহত হয়। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পূর্ব মেদিনীপুরের রিজিওনাল ম্যানেজার রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, ঝড়ের দাপটে কিছু খুঁটি, ট্রান্সফর্মার এবং তারের ক্ষতি হয়েছে। একটানা বৃষ্টির জন্য মেরামতির কাজে বিঘ্ন ঘটে।
ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় অনেকেই সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। গভীর রাতে সাইক্লোন আছড়ে পড়ার খবর ছিল। তবে, সাইক্লোনের দাপট ততটা শক্তিশালী ছিল না। যেকারণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাবাসী। শুক্রবার সকাল থেকেই দলে দলে লোকজন দীঘায় সাইক্লোন পরবর্তী ছবি দেখার জন্য ভিড় জমান। আসলে যশ সাইক্লোনের ভয়াবহ অবস্থার ছবি এখনও অনেকের চোখের সামনে ভাসে। তাই সকাল থেকে অনেকেই দীঘায় ভিড় করেন।শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুরে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত। রাস্তায় লোকজন একেবারে কম। যানবাহনও সেভাবে ছিল না। কাঁথি শহর একেবারে শুনশান ছিল। একই অবস্থা হলদিয়া ও তমলুকেরও। বেশিরভাগ দোকানপাটও বন্ধ ছিল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরবন্দি ছিলেন মানুষজন। ভগবানপুরে জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী।-নিজস্ব চিত্র