নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও আরামবাগ: ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ কতটা ক্ষয়ক্ষতি ঘটাবে, তা নিয়ে আতঙ্ক ছিলই। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধির উপর নজর রাখতে কন্ট্রোল রুম খুলে রাত জেগেছিল প্রশাসন। আরামবাগ ও বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমায় ঘূর্ণিঝড়ের কমবেশি প্রভাব পড়লেও ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেল পুরুলিয়া।
‘ডানা’র দাপটে বাঁকুড়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। শুক্রবারও দিনভর বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত হয় সাধারণ জনজীবন। রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। বাঁকুড়ার জেলার ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর লাগোয় ব্লকগুলিতে ঘূর্ণিঝড়ের বেশি প্রভাব পড়েছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের। তালডাংরা, সিমলাপাল ও ইন্দপুর ব্লকে এদিন সকাল থেকে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির দাপট লক্ষ্য করা যায়। সিমলাপাল বাজার মুসলিম পাড়ায় দু’টি মাটির বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলাজুড়ে বৃষ্টির বেগ বাড়তে থাকে। ঝোড়ো হাওয়ার তীব্রতাও বৃদ্ধি পায়। ফলে বহু মাটির বাড়ি, পানের বরজ, পাকা ধান ও সব্জির ক্ষয়ক্ষতি হয়। যদিও শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের তরফে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট জানানো হয়নি। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘ব্লকস্তর থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে। তবে দুর্যোগে বহু মানুষ সমস্যায় পড়লেও হতাহতের কোনও খবর নেই। প্রয়োজন পড়লে উপদ্রুত এলাকা থেকে দুর্গতদের উদ্ধার করে ত্রাণশিবিরে রাখা হবে।
ডানার প্রভাব পড়েছে হুগলির আরামবাগেও। বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। গোঘাটের শ্যাওড়া পঞ্চায়েতের বড়মা গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় এদিন বেলা ১১টা নাগাদ দু’টি গাছ ভেঙে পড়ে। তারজেরে দু’টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিস, প্রশাসন, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শেখ আব্দুল্লা হামজা ঘটনাস্থলে যান। গাছ দু’টি কাটা হয়। তারসঙ্গে দুই পরিবারকে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। এক বাড়ির সদস্য মোসলেমা বেগম বলেন, আচমকা ঝড়ে দু’টি শিমুল গাছ পড়ে যাওয়ায় আমরা খুব বিপদে পড়েছি। রান্না ও থাকার দু’টি ঘরই ভেঙে গিয়েছে। প্রতিবেশীর বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা নতুন করে ঘর আর মেরামত করতে পারব না। আমাদের সেই আর্থিক সঙ্গতি নেই। প্রশাসনের সাহায্য প্রয়োজন।
আরামবাগ থেকে বন্দর রুটে গনসা এলাকায় একটি গাছ পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে পুলিস গিয়ে গাছটি কেটে সরায়। খানাকুল-২ ব্লকের নতিবপুর এলাকায় এক বাসিন্দার বাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ে।
ঝড়, বৃষ্টির জেরে সমস্যায় পড়েছেন বন্যা দুর্গতরাও। প্রশাসন অবশ্য সতর্কতা নিয়ে আগাম তাঁদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ব্লকে বহু ত্রাণ শিবির খোলা হয়। এদিন সকাল হতে অবশ্য অনেকে বাড়ি চলে যান। তবু এখনও পর্যন্ত আরামবাগে তিনটি, পুরশুড়ায় পাঁচটি, খানাকুল-১ ব্লকে ছ’টি, খানাকুল-২ ব্লকে দু’টি ও গোঘাট-২ ব্লকে একটি করে শিবির চলছে। ত্রাণ শিবিরগুলিতে প্রায় ৬০০ দুর্গতকে রাখা হয়েছে। সেখানেই খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
আশঙ্কা থাকলেও ‘ডানা’র সেরকম প্রভাব পড়ল না পুরুলিয়ায়। পুরুলিয়ার বিভিন্ন ব্লকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবারও সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলে। দু’-এক জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিপত্তি ঘটলেও তড়িঘড়ি তা সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে গাছ উপড়ে পড়া কিংবা ঘরবাড়ির ভেঙে পড়ার খবর মেলেনি। কিছু বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক(উন্নয়ন) সুদীপ পাল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সবরকম পদক্ষেপই করা হয়েছিল। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সেরকম কোনও খবর মেলেনি। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’