সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাধাকুণ্ডে স্নান করতে নবদ্বীপের প্রতিটি গঙ্গার ঘাটেই কমবেশি ভিড় হয়েছিল। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার তা অনেকটাই কম ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘ ডানা’- র আতঙ্ক উপেক্ষা করেই মধ্যরাতের এই স্নানে বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপে পুণ্যার্থীর ঢল নামে।
এদিন সন্ধ্যা থেকে প্রতিটি স্নানের ঘাটে ছিল জোরদার পুলিসি নিরাপত্তা। মহিলা পুলিস কর্মীরাও ছিলেন। পাশাপাশি ছিলেন সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। পুরসভার পক্ষ থেকে প্রতিটি ঘাটেই স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়েছিল। সেইসঙ্গে ছিল স্বাস্থ্য শিবির। পুণ্যার্থীদের সাহায্যের জন্য ছিলেন স্থানীয় যুবকরাও। প্রতিটি ঘাটে স্থানীয় কাউন্সিলরদের অনেক রাত পর্যন্ত দেখভাল করতে দেখা যায়।
এদিন নবদ্বীপে বিভিন্ন মঠ মন্দির থেকে সাধুসন্ত বৈষ্ণব ও ভক্তরা কীর্তন সহকারে পুণ্যস্নানে আসেন। দীর্ঘক্ষণ তাঁরা গঙ্গার ঘাটে দাঁড়িয়ে কীর্তন পরিবেশনও করেন। রাত বারোটা পর থেকে পুণ্যার্থীরা পুণ্যস্নান শুরু করেন। প্রায় রাত দুটো পর্যন্ত অনেক মানুষই এই স্নান করেন। বৈষ্ণব এবং পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, এই তিথিতে স্নান করলে পূণ্য লাভ হয়। মূলত এই তিথিতে বৃন্দাবনের রাধাকুণ্ডে পুণ্যস্নান হয়। সেই উপলক্ষ্যে নবদ্বীপেও অনুষ্ঠিত হয় এই পুণ্যস্নান। তবে চৈতন্যভূমি নবদ্বীপের এই স্নান, ‘গৌর গঙ্গা স্নান’ বলে পরিচিত।
এদিন রানিরঘাট, পোড়াঘাট, শ্রীবাসঅঙ্গনঘাট, বড়ালঘাট, প্রাচীন মায়াপুরের শচীমাতা ঘাট সহ সব ঘাট মিলিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ পুণ্যস্নান করেছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
শুধু নবদ্বীপ নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, এমনকী উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকেও বেশ কিছু পুণ্যার্থী এসেছিলেন স্নান করতে। প্রতিটি ঘাটে ভিড় ঠেকাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ড্রপ গেট করা হয়েছিল। গঙ্গার ঘাটে ঘাটে বাঁশ দিয়ে আলাদা আলাদা প্রবেশ ও বাহিরপথ করা হয়েছিল। পাশাপাশি পুরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করে পুণ্যার্থীদের সাবধান করা হয়েছে। স্নান করতে এসে ভিড়ের মধ্যে কেউ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাকেও খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। এদিন পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা নিজে ঘাটগুলিতে উপস্থিত থেকে নজরদারি চালান। পুলিস প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ, ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) এম রহমান, নবদ্বীপ থানার আইসি জলেশ্বর তেওয়ারি প্রতিটি ঘাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন।