নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গ ভাসলেও ‘ডানা’র ঝাপটা ততটা তীব্র হল না। পূর্বাভাস মতোই বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’। কিন্ত ‘আইলা’, ‘উম-পুন’, ‘যশ’-এর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজ্যবাসী গত কয়েকদিন ধরে ‘ডানা’ নিয়ে যে আতঙ্কে ভুগছিল, তা সত্যি হয়নি। প্রচলিত বাক্যবন্ধ একটু বদলে নিয়ে বলা যেতেই পারে, বর্ষালেও গর্জাল না ‘ডানা’!
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে ভদ্রক জেলার ধামড়া ও ভিতরকণিকা সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করে। এর প্রভাবে মূলত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের উপকূলবর্তী দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। দু্র্যোগে তিনজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকের শ্রীধরনগর গ্রামের স্কুলছাত্র শুভজিৎ দাস (১০) নিজের বাড়ির গেটে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। হাওড়ার ডুমুরজলা তাঁতিপাড়া এলাকায় রাস্তার জমা জলে পড়ে মারা যান হাওড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মী গৌতম চট্টোপাধযায় (৩৯)। পুলিস জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ভবানীপুরে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান সৌরভ গুপ্ত (২২) নামে এক যুবক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি এলাকার জালাবেড়িয়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে মাটির বাড়ির দেওয়াল ধসে এক শিশু ও দুই মহিলা সহ মোট ৫ জন জখম হয়েছেন। তবে এই ঘূর্ণিঝড়ে ওড়িশায় কোনও মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে সেখানকার সরকার।
‘ডানা’র প্রভাবে অত্যধিক বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রচুর কাঁচাবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকায়। অনেক নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জল জমেছে চাষের জমিতেও। তবে উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দারাই বলছেন, এর আগের ঘূর্ণিঝড়গুলি অনেক বেশি ক্ষতি করেছিল। ‘ডানা’ নিয়ে সেরকমই আতঙ্ক থাকলেও শেষমেশ অল্পের উপর দিয়ে গিয়েছে।
আজ, শনিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে দুর্যোগের মাত্রা কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। আজ ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে কেবল দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার জন্য। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা এইচ আর বিশ্বাস বলেন, ‘কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় আকাশ কিছুটা মেঘলা থাকবে। এক-দু’পশলা বৃষ্টিও হতে পারে। উপকূল অতিক্রম করার পর বিকেলের মধ্যেই ‘ডানা’ দুর্বল হয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। উত্তর ওড়িশা থেকে পশ্চিম অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার পথে সেটি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।’
এদিকে, নবান্নে এদিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি—যেসব জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের কমবেশি প্রভাব পড়েছে, সেখানকার জেলাশাসকদের থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত রিপোর্ট নেন তিনি। তার আগে জেলাগুলির মন্ত্রী ও বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেন। নবান্নের ওই বৈঠকেই পাথরপ্রতিমায় একজনের মৃত্যুর খবর জানান তিনি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন মমতা। বলেন, ‘বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কোনও কিছুতেই কেন্দ্র টাকা দেয় না। কিন্তু আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই যাতে ত্রাণ পায়, সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।