নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঘূর্ণিঝড় ডানা আছড়ে পড়ার আবহে টানা ২৮ ঘণ্টা নবান্নে থেকে রাজ্যবাসীর সুরক্ষা সুনিশ্চিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা নাগাদ নবান্নে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। শুরু থেকেই পদস্থ কর্তাসহ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বারংবার যোগাযোগ করে ২ লক্ষাধিক মানুষকে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করেন তিনি। রাতে নবান্নে ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে জায়ান্ট স্ক্রিনে ঝড়ের গতিবিধির উপর নজর রাখতে রাখতেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে থাকেন তিনি। ঝড় শেষে প্রবল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গের আট জেলার বিধায়ক তথা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন উদ্বিগ্ন মমতা। তবে এখানেই শেষ নয়, এদিন দুপুর ১টায় পর্যালোচনা বৈঠক ডেকে দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ পৌঁছে দেওয়া নিয়েও কড়া বার্তা দিয়ে রাখলেন তিনি। জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ যেন বঞ্চিত না-হন। এনিয়ে কোনও অভিযোগও তিনি শুনতে চান না বলেও পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
রাতভর নজরদারি চলাকালে তিনবার নিজের ১৪ তলার অফিস থেকে নবান্নের তিনতলায় অবস্থিত বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে ছুটে যান তিনি। সেখানে বসেই রাত আড়াইটে নাগাদ স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর ফোন থেকে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নেন মমতা। শুক্রবার ভার্চুয়াল বৈঠকেও জেলাশাসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে গিয়েই মানুষের পাশে থাকতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি প্রাথমিক রিপোর্টে একেবারেই বিশ্বাসী নই। ত্রাণ পৌঁছনোর কাজকেই এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সরেজমিনে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করে পাঠাতে হবে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে। কতজনের বাড়ি ভেঙেছে, কোথায় ফসল নষ্ট হয়েছে এবং জাতীয় সড়ক বেহাল হল সবই থাকবে ওই রিপোর্টে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর, গোসাবা ও ডায়মন্ডহারবার, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট ও সন্দেশখালি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থেকে শুরু করে বাঁকুড়ার খাতরা, রানিবাঁধ ও সারেঙ্গা প্রভৃতি এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হওয়ারই আশঙ্কা রয়েছে বলে নির্দেশে উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর নির্দেশ—এনডিআরএফ, এসডিআরএফ দলকে যেন এখনই ছেড়ে দেওয়া না-হয়। দুর্যোগের আবহে ডেঙ্গু না ছড়ানোর বিষয়টিতে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। জোর দিতে বলা হয়েছে টেলিমেডিসিনে। জেলাগুলি থেকে অকারণে কলকাতায় রেফার না-করারও আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে সাপের কামড়ে যাতে কেউ মারা না-যান, তার জন্য পর্যাপ্ত অ্যান্টি ভেনাম ওষুধ মজুত রাখতে বলা হয়েছে। মাথাপিছু তিনটি ত্রিপল দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সুন্দরবন মাস্টার প্ল্যান নিয়ে নীতি আয়োগকে ফের চিঠি লিখবেন বলেও জানিয়েছেন মমতা। তবে সামান্য মাটি ফেলেই যাতে বাঁধ মেরামতি না-হয় সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে রাজ্য সেচদপ্তরকে।