• বৃষ্টির পূর্বাভাস মিললেও ঝোড়ো হাওয়ার গতি থাকল অনেক কম
    বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র ধাক্কায় কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হল। কিন্তু ঝোড়ো হাওয়ার তীব্রতা যতটা হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে তা দেখা গেল না। ঝোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার ও কলকাতায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওড়িশা উপকূলে ‘ডানা’ আছড়ে পড়ার সময় পূর্ব মেদিনীপুর উপকূলে ঝোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ৯০ কিলোমিটার হয়েছিল। কলকাতায় হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ হয় ৪০ কিলোমিটার। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় যে জায়গায় আছড়ে পড়ে, সেখানে হাওয়ার তীব্রতা কতটা হবে, তার সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া যায়। অন্যত্র পূর্বাভাস কিছুটা এদিক-ওদিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। ওড়িশা উপকূলে ভদ্রক জেলার ধামড়া ও ভিতরকণিকা সংলগ্ন এলাকায় ‘ডানা’র ল্যান্ডফল হয়েছে। সেখানে ঝোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছিল। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে একের পর এক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে। তাই ‘ডানা’ নিয়েও একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। 

    ২০২০ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘উম-পুন’ পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়েছিল। পরের বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে বালেশ্বরে। ‘যশ’-এর যেখানে ল্যান্ডফল হয়েছিল, তার কাছাকাছি অঞ্চলেই ‘ডানা’ স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। চলতি বছর ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তের সুন্দরবন উপকূল দিয়ে স্থলভাগে ঢোকে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ‘উম-পুন’ এবং ‘যশ’ ‘ডানা’র তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। 

    ‘উম-পুন’ আছড়ে পড়ার সময় ঝোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৮৫ কিলোমিটার হয়েছিল। খুব তীব্র মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করার পর কলকাতার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে গিয়েছিল। ‘যশ’-এর ক্ষেত্রে হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৫৫ কিলোমিটার। ‘যশ’ আছড়ে পড়ার সময় পূর্ণিমা থাকায় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস অনেক বেশি হয়েছিল। তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ উপকূল অতিক্রম করার সময় ঝোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। উপকূল অতিক্রম করার পর সেটি বেশ কিছু সময় স্থির ছিল। তারপর পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে যায়। এই গতিপ্রকৃতির জন্য কলকাতা ও সংলগ্ন জেলায় ‘রেমাল’-এর প্রভাব অনেকটাই পড়েছিল। এবারের ‘ডানা’ উপকূল অতিক্রম করার পর ওড়িশার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ঝড়ের তীব্রতা কম হওয়ার জন্য ‘আই’ বা কেন্দ্রস্থল তৈরিই হয়নি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিকর্তা।

    দানার প্রভাবে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ওড়িশার ভদ্রক ও সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ মিলিমিটারের (মিমি) বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এই সময়ে দক্ষিণবঙ্গে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবারে (৯৩ মিমি)। পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা (৩৭ মিমি) ও কাঁথিতে (৩৭ মিমি) বৃষ্টি হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)