নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মাদক মামালায় এবার বড়সড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। মাদক মামলার ক্ষেত্রে ১৮০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করলে অভিযুক্ত আর জামিন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন না। এটাই আইন। কিন্তু সম্প্রতি একটি মামলায় বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, মাদক মামলার ক্ষেত্রে ফরেন্সিক রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ। ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়া চার্জশিট অসম্পূর্ণ। ফলে ওই রিপোর্ট ছাড়া ১৮০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হলেও অভিযুক্ত জামিন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
মাদক মামলায় অভিযুক্ত ইদুল মিয়াঁ নামে এক ব্যক্তি জামিনের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলায় দেখা যায়, ১৭৭ দিনে পুলিস চার্জশিট পেশ করলেও তাতে ফরেন্সিক রিপোর্ট ছিল না। মামলাকারীর দাবি ছিল, ওই চার্জশিটের কোনও গুরুত্ব নেই। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। এই বক্তব্যের সপক্ষে মামলাকারীর আইনজীবী দাবি করেন, মাদক আইনের ৩৬এ(৪) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, চার্জশিট দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিযুক্তের কাছ থেকে প্রাপ্ত মাদকের কেমিক্যাল অ্যানালিসিস রিপোর্ট ও ফরেন্সিক রিপোর্ট যুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কর্ণাটক হাইকোর্ট, বম্বে হাইকোর্ট এবং জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্টের একাধিক রায়ের উল্লেখ করা হয়। সেইমতো রাজ্যের তরফে পাল্টা দাবি করা হয় যে, চার্জশিটে কোন কোন তথ্য থাকতে হবে তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারায় নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৭৩ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ১৮০ দিনের মধ্যে পেশ করা চার্জশিটের তথ্যে যদি কোনও ঘাটতি না-থাকে এবং তা যদি মামলার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ হয় সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত কোনোভাবেই জামিন পেতে পারেন না।
তখন মামলাকারীর তরফে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের কপির উল্লেখসহ দাবি করা হয়, ১৮০ দিনের মধ্যে পেশ করা চার্জশিটের মধ্যে যদি কেমিক্যাল অ্যানালিসিস রিপোর্ট ও ফরেন্সিক রিপোর্ট না-থাকে এবং তদন্তকারী সংস্থার তরফে যদি বলা হয়, ওই রিপোর্ট সাপ্লিমেন্টারি বা অতিরিক্ত চার্জশিটের সঙ্গে যুক্ত করা হবে, তবে সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে যে অভিযুক্তের জামিন ঠেকাতেই এমনটা করা হচ্ছে।
উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ডিভিশন বেঞ্চ তার নির্দেশে জানায়, কর্ণাটক হাইকোর্ট, বম্বে হাইকোর্ট এবং জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্টের এই সংক্রান্ত একাধিক রায় থাকলেও কলকাতা হাইকোর্টের এই সংক্রান্ত আগের নির্দেশকেই গুরুত্ব দিচ্ছে আদালত। আদালত আরও মনে করে, মাদক মামলার ক্ষেত্রে ফরেন্সিক রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ। ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়া চার্জশিট অসম্পূর্ণ। ফলে ওই রিপোর্ট ছাড়া ১৮০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হলেও অভিযুক্ত জামিন পাওয়ার যোগ্য। এই যুক্তিতেই অভিযুক্ত ইদুল মিয়াঁর জামিনও মঞ্জুর করে ডিভিশন বেঞ্চ।