• শুনশান মেট্রো-রেল স্টেশন,  ‘ডানা’র কোপে ঘরবন্দি শহর
    বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বৃষ্টিভেজা শহরে যেন কর্মনাশা বন্‌ধের চিত্র। কিংবা মনে হতে পারে, শুক্রবার ছিল জনতা কার্ফু। ‘ডানা’র ঝাপটা খাবার ভয়ে খুব প্রয়োজন না থাকলে শহরের নাগরিকরা বাড়ির দুয়ার খুললেন না। রেল স্টেশন বা মেট্রো, শপিং মল থেকে হাসপাতাল—সব শুনশান। শহরের অনেক রাস্তায় জমা জলের ঢেউ। গণপরিবহণ কার্যত অমিল। ‘বেরলে পৌঁছব কিভাবে? ফিরবই বা কি করে?’ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে এদিন অনেকের বের হওয়া হল না। 

    দুপুরের দিকে শিয়ালদহ স্টেশন ফাঁকা। ভিড় একেবারেই নেই। যাঁদের না বেরলেই নয়, তাঁরা বৃষ্টি কমার পর বেরিয়েছেন। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দেখা গিয়েছে, পাম্প করে জল বের করছেন রেলকর্মীরা। ক্যানিং-ডায়মন্ডহারবার-লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল ভিড়ে ঠাসা থাকে সাধারণত। এদিন কার্যত ফাঁকা। বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্মী ট্রেন থেকে নামলেন। তিনি বললেন, ‘ব্যাঙ্কে চাকরি করি। ভূমিকম্প হলেও যেতে হয়।’ শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরের চিত্রটাও একই। ট্যাক্সি-বাস-অটো কিছুরই প্রায় দেখা মেলেনি। এক ঘুগনি ব্যবসায়ী বললেন, ‘আজ একদম কম করে নিয়ে এসেছি। এটুকু বিক্রি হলেই বেঁচে যাই। তারপর বাড়ি চলে যাব।’ ধর্মতলা চত্বরে শুধু লাগেজ হাতে দূরপাল্লার যাত্রীদের ভিড়। নিউ মার্কেটের বেশিরভাগ দোকান ত্রিপলে ঢাকা। মেট্রো স্টেশনের চিত্রটাও অচেনা। ধর্মতলা, শ্যামবাজার, রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশনগুলিতে যে সময় তিলধারণের জায়গা থাকে না, এদিন সে সময় একেবারে শুনশান। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন বালির অবন্তী মুখোপাধ্যায়। মেট্রোতে আসার সময় বললেন, ‘দেরি করে হলেও অফিসে যেতেই হবে। বাড়ি থেকে বারবার ফোন করে জিজ্ঞেস করছে রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি।’ 

    এদিন সবথেকে বিপাকে পড়েছেন অসুস্থ মানুষের পরিজনরা। কারও শরীর খারাপ হলে তো যে করে হোক বেরতেই হবে। যাঁদের বাড়ির কেউ হাসপাতালে ভর্তি তাঁদের বেরতেই হয়েছে। সকাল থেকেই বৃষ্টিতে জলমগ্ন ছিল এসএসকেএম, ন্যাশনাল মেডিক্যাল, মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতাল। দুপুরে এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগের সামনে জল দাঁড়িয়ে। স্ত্রী রোগ বিভাগের ভিতরে পর্যন্ত জল ঢুকে গিয়েছে। পাম্প করে সেই জল বের করছিলেন হাসপাতালের কর্মীরা। সবমিলিয়ে প্রবল সমস্যায় পড়তে হয় রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের।   

    আর যাঁদের অফিসে ডুব দেওয়ার অবকাশ ছিল, এদিন তাঁরা বাড়িতে বসে জমিয়ে খেলেন গরম খিচুড়ি। কেউ বেগুন-আলু-ডিম ভাজায় মন দিলেন। কেউ ইলিশ মাছে। শহরের বিভিন্ন পাড়ায় মুদির দোকানগুলিতে চাল-ডাল আলাদা করেই রাখা ছিল। বিক্রেতা আসতেই ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্যাকেট করে রাখা চাল-ডাল। প্রবল ভুগলেন হাসপাতালে ছাউনি করে থাকা রোগীর আত্মীয়, ছোট ব্যবসায়ী। জরুরি পরিষেবার কাজে যুক্তরা। ডায়মন্ড হারবারের মফিজুল ডাব নিয়ে এসেছিলেন বিক্রি করবেন বলে। বৃষ্টিতে ভিজে দুপুরেই বললেন, ‘বাড়ি যাই। আজ আর কেউ ডাব খাবে না।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)