• দিনভর ভোগান্তি বালিগঞ্জ-এক্সাইড সহ দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে
    বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘জল ফেলবে কোথায়? উল্টে খালের জল তো ওভার ফ্লো (উপচে পড়ছে) করছে।’ শুক্রবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ফোনের ওপারে থাকা এক ব্যক্তিকে এ কথা বললেন কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের এক আধিকারিক। বালিগঞ্জ নিকাশি পাম্পিং স্টেশন সংলগ্ন সাবারবার্ন হেড কার্ট ক্যানেল (খাল) তখন জলে ভর্তি। পাম্পিং স্টেশনের পাইপলাইনও খালের জলের তলায়। পাম্প চালিয়ে জল খালে ফেলা যাচ্ছে না। উল্টে খালের জল পাম্পিং স্টেশনে ঢুকে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়। বালির বস্তা দিয়ে তা আটকায় পুরসভা। পলি জমে খালের নাব্যতা কমে যাওয়ার জেরেই কি এই পরিস্থিতি, উঠছে প্রশ্ন। ফলে এদিন দিনভর জমা জলের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বালিগঞ্জ, এক্সাইড, বেকবাগান সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সেচদপ্তরের দাবি, গত ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে তিন কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা খরচ করে এই খালের ৭.৩ কিমি সংস্কার হয়েছে। এখনও নিয়মমাফিক দেখভালের কাজ চলছে। চলতি বর্ষায় কোনওদিন খাল উপচে পড়েনি। 

    পুরসভার দেওয়া তথ্য বলছে, এদিন ভোর পাঁচটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত শুধুমাত্র বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশন জোনে ১২৪ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এই স্টেশন পার্ক সার্কাস, বেকবাগান, গোলপার্ক, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, সার্দান অ্যাভিনিউ, এক্সাইড, পার্ক স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, রাসবিহারী, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, হাজরা, বন্ডেল গেট সহ দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার জমা জল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। কিন্তু খালের জলস্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে সেই পাম্পিং স্টেশনের পাম্প দীর্ঘক্ষণ বন্ধ রাখতে হয় পুর কর্তৃপক্ষকে। যার জেরে এক্সাইড, বেকবাগান, রবীন্দ্রসদন, ঢাকুরিয়া, বালিগঞ্জ প্লেস, এলগিন রোড, যদুবাবুর বাজার সহ দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বেশ কয়েক ঘণ্টা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এমনকি এসএসকেএম হাসপাতালও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জল নামতে বিকেল হয়ে যায়। চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়, রোগীর পরিবার থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মীদের। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের রাস্তাও দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন ছিল। একদিকে জলস্তর বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে পলি জমার জেরে নাব্যতা কমে যাওয়া-সাবারবার্ন হেড কার্ট ক্যানেল মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টির জল ধরে রাখতে পারেনি। উপচে পড়ে। পুর আধিকারিকরা বলেন, খাল সংস্কার করা থাকলে এই অবস্থা হতো না। সেচদপ্তরের দিকে অবশ্য সরাসরি আঙুল তুলতে নারাজ পুরসভার নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিং। তিনি বলেন, সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় গঙ্গা, বিদ্যাধরীর জলস্তর বেড়েছে। ফলে শহর ও শহর সংলগ্ন খালগুলিতেও জলের মাত্রা বেড়েছে। তার উপর অতিবর্ষণ। ফলে বালির বস্তা দিয়ে পাম্পিং স্টেশনে খালের জল ঢোকা আটকাতে হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ পাম্প বন্ধও রাখতে হয়। দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার জল বের করতে সমস্যা হয়েছে। বিকেলের দিকে বৃষ্টি কমার পর ধীরে ধীরে নামানো গিয়েছে জমা জল। 
  • Link to this news (বর্তমান)