৪.৭৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন অনিকেতরা, অভিযোগ জুনিয়র চিকিৎসকদের অন্য একটি অংশের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অভ্যন্তরে ‘থ্রেট কালচার’ চলে বলে অভিযোগ তোলেন আন্দোলনরত পড়ুয়া চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদাররা। ‘থ্রেট কালচার’ নিয়ে তাঁরা সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। এবার ‘আন্দোলনরত’ জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’-এর বিপরীত ‘টেরর কালচার’ চালানোর অভিযোগ তুললেন আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন।
বিচারের দাবিতে এবার ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের বিরুদ্ধে পাল্টা সংগঠন গড়লেন পড়ুয়া চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
কী সেই অভিযোগ?
আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, কর্মরত জুনিয়র চিকিৎসকরা বিচারের দাবিতে ৪.৭৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি বিচারের দাবিতে রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রগুলিতে অরাজকতা তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন জুনিয়র চিকিৎসকদের ওই সংগঠন। এই দাবিগুলিকে সামনে রেখে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান বলে আর্জি জানিয়েছেন। শনিবার তাঁদের সাংবাদিক বৈঠক থেকে এই দাবি তোলেন।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের বিরুদ্ধে গড়া আরজি করের বিক্ষুব্ধ ওই সংগঠনের জুনিয়র চিকিৎসক শ্রীশ দাবি করেন, তাঁরাই প্রথম আরজি করের বিচারের দাবি চেয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তবে প্রথম থেকে তাঁরা বলে এসেছিলেন, কর্মবিরতি মানবেন না। রোগী পরিষেবা অক্ষুন্ন রেখেই তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সেই দাবি করাতেই তাঁদের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’-এ নামেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা।
আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসক শ্রীশের আরও দাবি, ‘জোর করে মিথ্যেকে সত্যি করা হল। চাপ দিয়ে নিজেদের মতো এনকোয়ারি কমিটি তৈরি করে আমাদের ৫৩ জনকে সাসপেন্ড করা হল। আমাদের ওপর দিয়ে কী গেছে বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল।‘
উল্লেখ্য, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের লাগাতার বিভিন্নরকম আন্দোলনের জেরে সম্প্রতি আরজি করে বসেছিল তদন্ত কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে সাসপেন্ড করা হয় ৫৩ জনকে। শ্রীশ চক্রবর্তী, সৌরভ দাসরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
তাঁদের সাসপেন্ড করা হলে, সাসপেনশনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে আদালতে যান তাঁরা। হাইকোর্টের তরফে সাসপেনশনে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশের পরও সাসপেন্ডেড স্টুডেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি কলেজে, অভিযোগ তোলেন শ্রীশ।
তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশের পরও আমাদের কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়না। এমনকি গত সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে আমাদের নটোরিয়াস ক্রিমিনাল বলে আখ্যা দেওয়া হয়। আচ্ছা, যারা নির্যাতিতা দিদির বিচারের নামে ৪.৭৫ টাকা তুলেছে, তারা কি নটোরিয়াস ক্রিমিনাল নয়?’ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
অনিকেতদের বিরুদ্ধে ‘টেরর কালচার’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন শ্রীশ। তাঁর দাবি, ‘নির্যাতিতার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সই করার জন্য রিয়া বেরা নামে এক চিকিৎসকের অ্যাকাউন্টে ২৮ লক্ষ টাকা ঢুকেছে।’ সেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার দাবি তুলেছে জুনিয়র চিকিৎসকদের বিক্ষুব্ধ সংগঠন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের বিরুদ্ধে গড়া সংগঠনের আরও অভিযোগ, ‘মূল ইস্যু থেকে সরে অনিকেত, দেবাশিসরা আন্দোলনকে বেলাইন করছে। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে আমরাই থ্রেট কালচারের শিকার হয়ে গেলাম। সে কারণেই বাধ্য হয়ে আমরা নতুন সংগঠন তৈরি করে মানুষের কাছে সবটা জানাতে সামনে এলাম।‘
উল্লেখ্য, ৯ অগাস্ট ঘটে যায় আরজি করের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই ইস্যুকে সামনে রেখে আজ আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ডাক দেওয়া হয় গণকনভেনশনের। সেই কনভেনশনে যাঁরা উপস্থিত থাকবেন, তাঁদের মধ্যে কতজন ডাক্তার, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পড়ুয়া চিকিৎসকদের অপর সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
তবে এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি অনিকেত, দেবাশিসরা।