নয়া বয়ফ্রেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে মারধর, আত্মঘাতী প্রেমিক
এই সময় | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়, রায়গঞ্জ: স্কুল লাইফ থেকে সম্পর্কের শুরু। তারপর বছর কয়েক চুটিয়ে প্রেম। কিন্তু স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পা দিতেই নতুন বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে প্রথম প্রেমিককে প্রত্যাখ্যান করে প্রেমিকা। তার জেরেই বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হলো প্রথম প্রেমিক। এমনই অভিযোগে শনিবার উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থানা এলাকায় কলেজপড়ুয়া তরুণীর বাড়িতে চড়াও হয়ে বিক্ষোভ দেখায় মৃত অচিন্ত্য মজুমদার (২০)-এর পরিবার। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন প্রতিবেশীরাও। বাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। ইসলামপুর থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মৃত যুবকের পরিবারের অভিযোগ, ‘কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণীর প্ররোচনাতেই মৃত্যু হয়েছে অচিন্ত্যর।’ ইসলামপুর থানায় লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রেমিকার মা-কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দশ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর একমাত্র সন্তান অচিন্ত্যই ছিল সবিতার সম্বল। তিনি বলেন, ‘আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? হাসপাতালে শুয়ে ছেলেটা বারবার বলছিল, ‘একবার ওকে নিয়ে এসো। ওর মুখটা একটু দেখব। ওই মেয়ের জন্যই আমার ছেলের প্রাণ গেল।’
ইসলামপুর থানার আইসি হীরক বিশ্বাস জানিয়েছেন, মৃত যুবকের পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মূল অভিযুক্ত তরুণীর মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কেন হঠাৎ আত্মহত্যা করতে গেলেন অচিন্ত্য? অভিযোগ, গত মঙ্গলবার পুরোনো প্রেমিককে ফোন করে নিজের গ্রামে ডাকেন তরুণী। এরপর নতুন প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে অচিন্ত্যকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। সেদিনই বাড়িতে ফিরে অভিমান ও অপমানে বিষ খেয়ে আত্মহতা করেন তিনি। ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় পরে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পরে শনিবার সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অচিন্ত্য। খবর গ্রামে পৌঁছতেই এ দিন তাঁর পরিজন ও প্রতিবেশীরা তরুণীর বাড়িতে চড়াও হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দাড়িভিট হাইস্কুলে পড়ার সময়ে দু’জনের আলাপ। সে প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। অল্পদিনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দু’জনে। মৃত যুবকের জ্যেঠিমা মণিকা মজুমদার বলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময়েই মেয়েটি একবার আমাদের বাড়িতে চলে এসেছিল। দুই বাড়ির অভিভাবক, গ্রামের লোকজনকে নিয়ে আলোচনায় বসে ঠিক হয়, ওরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে এবং ছেলে উপার্জনক্ষম হওয়ার পরে বিয়ে দেওয়া হবে।’অচিন্ত্যর পরিবারের দাবি, বিয়ে না হলেও যুগলের প্রেম চলছিল অবাধে। সেদিনের স্কুল পড়ুয়া এখন বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক স্তরের ছাত্রী। কিছুদিন আগে হঠাৎ সেই সম্পর্কে ছেদ পড়ে। অভিযোগ, পেশায় কম্পিউটার শিক্ষক অন্য এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তরুণী। তার পর থেকেই যুবককে এড়িয়ে চলতেন বলে অভিযোগ। কিন্তু এই প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারেননি পেশায় গ্যারাজ কর্মী অচিন্ত্য। নানা অছিলায় প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতেন তিনি। প্রেমের টানে তিনি হবু স্ত্রীকে মাঝেমধ্যেই নানা উপহার দিতেন, প্রয়োজনীয় খরচও জোগাতেন। তারপরেও কেন এমন পরিণতি, বুঝে উঠতে পারছেন না মৃতের পরিজনরা।