এই সময়, আলিপুরদুয়ার: ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে রক্তের পাউচ খুবলে খাচ্ছে পথ কুকুর। এর পরে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল চত্বর জুড়ে পাউচ নিয়ে কুকুরটিকে ঘুরে বেড়াতেও দেখা যায়। সে দৃশ্য ভাইরাল হতেই সরব নেটিজ়েনরা। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন রক্তদান আন্দোলন নিয়েও। যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শনিবার সাতসকালে তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে জেলা হাসপাতালের নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সুইপারকে শো-কজ় করেছেন হাসপাতাল সুপার চিকিৎসক পরিতোষ মণ্ডল। সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির বিষয়টিও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
আদতে কী ঘটেছিল, যার জন্য পথকুকুর ওই রক্তের পাউচটির নাগাল পেয়ে যায়? গত ২৪ অক্টোবর বীরপাড়ার একটি চা-বাগানের ১৩ বছরের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক কিশোরীকে রক্ত দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরো রক্ত লাগেনি, দেওয়ার পরে কিছুটা বেঁচে গিয়েছিল। স্বাস্থ্য দপ্তরের নিয়ম অনুসারে, ওই ব্যবহৃত রক্তের পাউচটিকে হলুদ রংয়ের বিশেষ প্লাস্টিকে মুড়ে নির্দিষ্ট কন্টেনারে রেখে ডিসপোজ়ালে পাঠানোর কথা।কিন্তু ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুইপার পাউচটি ডিসপোজ়াল কন্টেনারে সংরক্ষণ না করে ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে ফেলে রেখে দেন বলে অভিযোগ হাসপাতাল সুপারের। সেখান থেকেই পাউচটির নাগাল পেয়ে যায় ওই পথকুকুর।
জেলা হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক পরিতোষ মণ্ডল বলেন, ‘প্রথমেই আমরা গাফিলতির বিষয়টি স্বীকার করে নিচ্ছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সুইপারের গাফিলতির কারণেই ঘটনাটি ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে শোকজ় করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে দিকে আমাদের কড়া নজর থাকবে।’
এ দিন ভিডিয়োটি ভাইরাল হতেই তা নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয় নেট মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে আবার এই ভিডিয়োর প্রেক্ষিতে রক্তদান নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেন। যেমন, ওই ভিডিয়োটির কমেন্ট সেকশনে মীনাক্ষী ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘এক পাউচ রক্তের জন্যে যখন হাহাকার ওঠে, সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে
এ দৃশ্য দেখার পর সাধারণ রক্তদাতারা এর পর থেকে কোন বিশ্বাসে রক্তদান করবেন?’
অরিত্রিক রায় লিখেছেন, ‘প্রতি বছর রক্তদান করি মুমূর্ষু রোগীদের প্রাণ বাঁচানোর মানসিকতা নিয়ে। সেই রক্ত সঠিক ভাবে সংরক্ষিত না হয়ে যদি রাস্তায় লুটোপুটি খায়, এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের নজির আর কী হতে পারে?’ জীবন মিত্র লিখেছেন, ‘এই দৃশ্য দেখার পর মানুষ কোন ভরসায় রক্তদান করবেন? মানছি গাফিলতি। কিন্তু সাধারণ মানুষ এত টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর জন্য বসে নেই।’ রূপালী ঘোষ লিখেছেন, ‘রক্তদান করার পর এই দৃশ্য যদি দেখতে হয়, তারপর মানসিকতা ঠিক রাখা যায়?’
আলিপুরদুয়ারের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক রাতুল বিশ্বাস বলেন, ‘এক পাউচ রক্ত জোগাড় করতে আমাদের বছরভর কতটা মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়, তা আমরাই জানি। সাধারণ রক্তদাতারা তো আর সঠিক তথ্য যাচাই করবেন না। ফলে ওই দৃশ্য ভাইরাল হওয়ায় অনেকের মনেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।’
দীর্ঘ দিন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত পুষ্পেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘পুরোনো পাউচটি ঠিক করে ডিসপোজ় হওয়া দরকার ছিল। সেটা না করায় এমন দৃশ্য দেখতে হলো।’
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কোয়েস্ট ফর লাইফ’-এর সাধারণ সম্পাদক অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, ‘ঠিক মতো ডিসপোজ়াল না-হওয়াটা অবশ্যই হাসপাতালের গাফিলতি। তবে যাঁরা রক্তদান নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা নিজেরা আদৌ কোনও দিন রক্তদান করেছেন কি না, তা নিয়েও আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ যাঁরা নিয়মিত রক্তদান করেন, তাঁরা বুঝবেন যে, এখানে বিষয়টি রক্ত অপচয়ের নয়। বরং এটা ব্যবহৃত পাউচ ডিসপোজ়ালের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত গাফিলতির ঘটনা।’