সংবাদদাতা, কাঁথি: রামনগর-২ ব্লকের কাদুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধানের ‘দলবদল’কে ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রধান রতিকান্ত দাস এবং বিজেপির সদস্যা সোমা মাইতির তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ভিডিও দৃশ্য সামনে আসে। যদিও শুক্রবার প্রধান ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে অন্য এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, তিনি বিজেপিতেই আছেন। বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত অফিসেই ছিলেন। তাঁকে পরিকল্পনা করে মাদকমিশ্রিত পানীয় খাইয়ে কয়েকজন জোর করে তৃণমূলের পতাকা ধরিয়ে দেন। তার ভিডিও করা হয় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে তাঁকে জাতপাত তুলে গালিগালাজ এবং মারধরও করা হয়। প্রথমে কাঁথির মাজনা হাসপাতাল, পরে তমলুকের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান। পাশাপাশি তৃণমূল উপপ্রধান অনিতা দাসের স্বামী চিন্ময় দাস সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে রামনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন। তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। শাসকদলের নেতাদের দাবি, প্রধান তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকে আছেন। কিন্তু দলেরই চাপে পড়ে এখন উল্টো বকছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানের তৃণমূলের যোগদানের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, তৃণমূলের অঞ্চল সহ-সভাপতি মৃগাঙ্ককুমার দাসের হাত থেকে ঘাসফুলের পতাকা ধরছেন তিনি। তারপর থেকে প্রধানকে নিয়ে পদ্মশিবির ও ঘাসফুল শিবিরের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়। পঞ্চায়েত বিজেপির হাতছাড়া হল কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রধান দলে আসায় পঞ্চায়েতে তৃণমূল শক্তিশালী হল বলেও নেতারা দাবি করেন। এরপরই প্রধানের পাল্টা ভিডিও সামনে আসে।
২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাদুয়া পঞ্চায়েতে ১৫টি আসনের মধ্যে ১১টিতে তৃণমূল জয়ী হয়। চারটি পেয়েছিল বিজেপি। তবে প্রধান পদটি তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত ছিল। তৃণমূলের প্রার্থী ওই আসনে পরাজিত হন এবং বিজেপির রতিকান্তবাবু জয়ী হন। তিনিই প্রধান পদে বসেন। উপপ্রধান হন তৃণমূলের অনিতাদেবী। সংরক্ষণের গেরোয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও পঞ্চায়েতের রাশ হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। তবে গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের দুই সদস্য বিজেপিতে যোগ দেন। এর ফলে তৃণমূল-বিজেপি ৯-৬ সমীকরণ হয়। তার মধ্যেই প্রধানের তৃণমূলে যোগদানের খবর নিয়ে এলাকায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
সমগ্র বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য রতিকান্তবাবুকে ফোন করা হয়। তবে তিনি ‘অসুস্থ’ জানিয়ে ফোন কেটে দেন। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ দাস বলেন, রতিকান্তবাবুকে মাদক মেশানো কিছু খাইয়ে জোর করে মিথ্যে কথা বলানো হয়েছিল। উনি আমাদের দলেই আছেন। ব্লক তৃণমূল সভাপতি সত্যরঞ্জন রায় বলেন, রতিকান্তের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চলছে। তাঁর আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা। তবে কে বা কারা অত্যুৎসাহী হয়ে আগেই যোগদানের ভিডিও ভাইরাল করেছে। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তমালতরু দাসমহাপাত্রও বলেন, বিজেপিতে থেকে সঠিকভাবে পঞ্চায়েত পরিচালনা করতে পারছিলেন না প্রধান। তাই তৃণমূলে যোগদানের ইচ্ছে অনেক আগেই প্রকাশ করেছিলেন। হয়তো এখন দলের চাপে উনি এমন কথা বলছেন।
তবে যাই হোক না কেন, খোদ পঞ্চায়েত অফিসে একজন প্রধানকে মাদক মেশানো পানীয় খাওয়ানো যায়? অনেকেই বলছেন, প্রধান তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ঠেলায় পড়ে পাল্টি খান। মাদকমিশ্রিত পানীয় খেয়ে কেউ অচেতন হয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু পতাকা ধরা কিংবা দলবদলের বার্তা দেওয়া কীভাবে সম্ভব?