পড়াশোনার চাপ থেকে মুক্তি দিতে মেয়েকে খুন মায়ের! বারাকপুর কাণ্ডে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে পুলিস
বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: যথেষ্ট মেধাবী হলেও পড়াশোনার চাপ নিতে পারছিল না সে। এই সমস্যার কথা মাকে জানিয়েওছিল বারাকপুরের একটি নামকরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রাজন্যা ঘোষ (১২)। তাই মেয়েকে চাপমুক্ত করে মানসিক স্থিতি দিতে খুন করেছে মা! কোনও আষাঢ়ে গপ্পো নয়, মেয়েকে খুনের অভিযোগে ধৃত মা কবিতা ঘোষ জেরায় এমনটাই জানিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পর দাবি পুলিসের। ধৃত কবিতা ঘোষকে শনিবার বারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিস ধৃতের দাবির সত্যতা যাচাই করতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছে।
এদিকে, মর্মান্তিক এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন ছোট্ট রাজন্যার বাবা ইন্দ্রজিৎ ঘোষ। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ইন্দ্রজিৎবাবু ভাবতেই পারছেন না, এভাবে মায়ের হাতেই মেয়েকে খুন হতে হবে। তিনি জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর স্ত্রী মানসিক সমস্যায় (স্কিৎজোফ্রেনিয়া) ভুগছে। কিন্তু তার পরিণতি যে এমন মর্মান্তিক হতে পারে, দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। ইন্দ্রজিৎবাবু পুলিসকে জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুর গড়িয়ে গেলেও স্ত্রী ও মেয়ের কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি কয়েকবার ডাকাডাকি করেন। পরে পুলিস এসে ঘরের মধ্যে বিছানার উপর শুয়ে থাকা অবস্থায় মেয়ের দেহ উদ্ধার করে। তাঁর স্ত্রী তখন দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এমন ঘটনা মানসিক রোগের কারণে হতে পারে। কবিতাদেবী হয়তো ভেবেছিলেন, একমাত্র মৃত্যুই তাঁর মেয়েকে সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি দেবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দ্রজিৎবাবুরা আগে থাকতেন শ্যামনগরে। স্বামী, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। কিন্তু সেখানে পড়শিদের সঙ্গে ঝামেলার কারণে ১০ মাস আগে বারাকপুর আনন্দপুরী ডি রোডে বাড়ি কিনে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। তদন্তে নেমে টিটাগড় থানার পুলিস জানতে পেরেছে, বৃহস্পতিবার রাতে মা, বাবা ও মেয়ে একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া করে। তারপর তিনজন ঘুমাতে যায়। মা ও মেয়ে এক ঘরে ছিল। পাশের ঘরে ঘুমোতে যান ইন্দ্রজিৎবাবু। তিনি পুলিসকে জানিয়েছেন, শুক্রবার টানা বৃষ্টির কারণে তিনি অফিস যাননি। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেলেও স্ত্রী ও মেয়ের কোনও সাড়াশব্দ না পাওয়ায় সন্দেহ হয়। বারাকপুরের পুলিস কমিশনার অলক রাজোরিয়া বলেন, ‘অভিযুক্তের মানসিক সমস্যা রয়েছে। নিয়মিত ওষুধও খান। মানসিক অস্থিরতার কারণে এই অঘটন ঘটিয়ে থাকতে পারেন। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেওয়া হচ্ছে।