• ঝাড়গ্রামে আদিবাসী পরিবারে কন্যারূপে পূজিত হন মাকালী
    বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • সমীর মাহাত, ঝাড়গ্রাম: একটি দৈব চিমটে পেয়ে অলৌকিক ক্ষমতা পেয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের হরিণা গ্রামের আদিবাসী দিনমজুর ধর্মদাস সোরেন। কালীর আরাধনা করে তিনি হয়ে ওঠেন ‘কুটু যান ‘ বা ‘সাধু যান’। ৭১ বছরেরও  বেশি পুরানো এই পুজো এখনো তার উত্তরসূরিরা স্বমহিমায় ধরে রেখেছেন। নির্মিত হয়েছে কালী মন্দির। কালীপুজোর সময় ছাড়াও সারা বছর এই মন্দিরে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। কলকাতা শহর থেকে এমনকি ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা থেকেও দল বেঁধে ভক্তরা এখানে পুজো দেওয়ার জন্য আসেন। 

    জানা গিয়েছে, বহু বছর আগে পূর্বের সমতল এলাকায় দিনমজুর খাটতে গিয়েছিলেন ধর্মদাস সোরেন। তাঁর কর্মস্থলের সামনেই শ্মশানের একটি মন্দিরে পশ্চিমী সাধুরা থাকতেন। সেই এলাকার লোকজনের মুখে তিনি শুনেছিলেন সে মন্দিরের পাশে একটি চিমটে পোঁতা রয়েছে। সেই চিমটে যে উদ্ধার করতে পারবেন, তিনি দৈব শক্তির অধিকারী হবেন। এই কথা জানার পর তিনি সেই দৈব চিমটে উদ্ধার করেন। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে এসে তিনি অলৌকিক ও দৈব শক্তি পেয়ে  কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। 

    ঝাড়গ্রামের সাপধরা গ্রামপঞ্চায়েতের  হরিণা গ্রামের  সোরেন পরিবারের এই কালীপুজো ৭১ বছরেরও বেশি পুরানো। এই মন্দিরে কালী কন্যা রূপে পুজিত হন। এটি তাঁদের কুলদেবী। ধর্মদাসবাবু এলাকায়  ‘কুটু যান’ বা ‘সাধু যান’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ও বৌমারা এই পুজো চালিয়ে আসছেন। এই নিয়ে ধর্মদাসবাবুর ছেলে পেশায় স্কুল শিক্ষক রাজকুমার সোরেন বলেন, এই দেবী আমাদের কুলদেবী। এখানে মাকালী কন্যা রূপে শুভ শক্তির আরাধ্য হিসেবে পুজিত হন। আমার বাবার হাত ধরেই এই পুজোর শুরু। তাঁর আমলেই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুভ শক্তির আরাধনায় আমাদের এখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই পুজো দিতে আসেন। বাবা ছিলেন গরিব দিনমজুর। কাজ করতে গিয়ে তিনি একটি দৈব চিমটে উদ্ধার করেছিলেন। বাবা বলেছিলেন, প্রথম দিন সেটি উদ্ধারের সময় তাতে আগুন জ্বলে উঠেছিল। বাড়িতে ফিরে আসার পর বাবার মধ্যে কিছু অলৌকিক ও দৈব শক্তির ঘটনা ঘটে। 

    সেই সময় থেকেই আমাদের কালীপুজো শুরু হয়। এমনিতে জাহের থানে আমাদের পুজো দেওয়া সহ বিবাহ ও শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান আমাদের সামাজিক রীতি মেনেই হয়। হাজার হাজার মানুষজন এখানে পুজো দিয়ে উপকার পেয়েছেন। কলকাতা, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড থেকে এখানে পুজো দিতে অনেকেই আসেন। আমরা পরিবারের সবাই বিভিন্ন কর্মে যুক্ত আছি।  বাবার মৃত্যুর পর  দাদা , বউদি, আমি ও আমার স্ত্রী রোটেশন করে পুজো করি।
  • Link to this news (বর্তমান)