কাল থেকে দুয়ারে শিবিরে বাংলা শস্য বিমার আবেদন গ্রহণ করবে প্রশাসন
বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র জোড়া ফলায় হুগলিতে চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের ভরসা জোগাতে ‘বাংলা শস্য বিমা’-য় জোর দিচ্ছে প্রশাসন। জেলায় ১০০ শতাংশ চাষিকে বিমার আওতায় আনতে এবার ‘দুয়ারে’ শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। শনিবারই এই প্রসঙ্গে নির্দেশ দিয়েছে হুগলি জেলা প্রশাসন। আগমী কাল, সোমবার থেকেই বিশেষ ক্যাম্প শুরু করতে চলেছে কৃষিদপ্তর। ইতিমধ্যে বিমা করানোর সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত করেছে রাজ্য। আগামী এক মাস ধরে আরামবাগ মহকুমা সহ জেলার সর্বত্রই এই ক্যাম্পগুলি হবে।
কৃষিদপ্তরের হুগলির উপ কৃষি অধিকর্তা(প্রশাসন) মৃত্যুঞ্জয় মর্দুনা বলেন, জেলায় বর্তমানে আড়াই লক্ষের বেশি চাষির কাছ থেকে বিমার ফর্ম সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাবে নতুন করে আরও অনেক চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই বিমার সুযোগ থেকে কেউ যাতে বাদ না পড়েন আমরা তা নিশ্চিত করতে চাইছি। এজন্য চাষিদের আরও কাছে গিয়ে ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেইমতো তা শুরু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দু’বার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় আরামবাগ মহকুমায়। দ্বিতীয় দফার বন্যার ধাক্কা ছিল ভয়াবহ। খানাকুলের দু’টি ব্লকে আমন চাষ একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রভাব পড়েছে আরামবাগ, পুরশুড়া, গোঘাট-১ ও ২ ব্লকের একাংশেও। ওই সময় থেকেই কৃষিদপ্তর বিভিন্ন পঞ্চায়েত অফিসে ক্যাম্প করে বাংলা শস্যবিমার ফর্ম সংগ্রহ করে। বিমা করানোর জন্য চাষিদের প্রিমিয়ামের টাকা অবশ্য রাজ্য সরকারই দিচ্ছে। তাই যাতে বেশি সংখ্যক চাষি বিমার আওতায় আসেন তা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য কৃষিদপ্তরের। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাবেও আরামবাগ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান গাছ নুয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও আবার কৃষি জমিতে জলও দাঁড়িয়ে পড়েছে। তাই সেইসব ধানচাষে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বিমা নিয়ে অবশ্য রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, বন্যা ও ‘ডানা’র জেরে আরামবাগ মহকুমায় চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই অবিলম্বে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। রাজ্য সরকার চাষিদের বিমার নামে প্রহসন করেছে। আমরা বিগত দিনে তা দেখেছি। এবারও যদি না দেয় বিজেপি আন্দোলন করবে।
তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, ঝড় বৃষ্টিতে চাষে যা ক্ষতি হয়েছে, তারজন্য ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিমা করানোয় জোর দিয়েছেন। বিগত দিনেও চাষিরা মহকুমায় ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। বিজেপি বরাবরই মিথ্যা অভিযোগ করে রাজনীতি করে। অথচ কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ আনতে তারা ব্যর্থ।
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলি জেলায় গত শুক্রবার পর্যন্ত বাংলা শস্য বিমায় প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার ৩০০ ফর্ম সংগ্রহ করা হয়েছে। তারমধ্যে পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ফর্ম। এবার বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েতের পাশাপাশি স্থানীয় স্কুল, কমিউনিটি হলে শিবির করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় যাতে চাষিদের শিবিরগুলিতে যাতায়াতে সুবিধা হয়, সেই কথা ভেবেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।