সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: পঞ্চমুণ্ডির আসনে অধিষ্ঠিত বিষ্ণুপুরের নতুনমহল শ্মশানকালী মা এবার নবনির্মিত মন্দিরে পূজিত হবেন। আজ, রবিবার মন্দিরের শুভ উদ্বোধন করবেন পণ্ডিত আদিত্যকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রা সহ দিনভর ভক্তিমূলক নানা অনুষ্ঠান হবে। সপ্তাহজুড়ে নানা অনুষ্ঠান চলবে। শনিবার অন্নকুট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ও মাতৃআরাধনার কাজ সম্পূর্ণ হবে। নতুনমহল শ্মশানকালী মন্দির পরিচালন কমিটির সভাপতি বিবেকানন্দ ঘোষ বলেন, প্রাচীন এই মা কালীর প্রতি বিষ্ণুপুরের মানুষের আলাদা আবেগ রয়েছে। নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো নতুনমহল শ্মশানকালীর মন্দির প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সঙ্গে তারাপীঠের মা কালীর মিল রয়েছে। একসময় এলাকাটি জঙ্গলে ভর্তি ছিল। তারই মধ্যে সুধীরানন্দ সরস্বতী নামে এক কাপালিক তন্ত্র সাধনা করতেন। বিষ্ণুপুরে কলেরার প্রকোপে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সৎকারের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় মৃতদেহগুলি ওই এলাকায় ফেলে দেওয়া হতো। অনেকেই ভয়ে বিষ্ণুপুর ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় বিষ্ণুপুরের কোনও এক ব্যক্তি কাপালিকের শরণাপন্ন হন। তখন ওই কাপালিক হাতের ত্রিশূল ছুড়ে দিয়ে বলেন, মাটিতে যেখানে ত্রিশুল গাঁথা হয়েছে, সেখানে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসিয়ে মা কালীর পুজো করতে হবে। তাঁর কথামতো স্থানীয় কিছু ব্যক্তি খড়ের চালা ঘর করে সেখানে পুজো করেন। তারপর ধীরে ধীরে কলেরার প্রাদুর্ভাব কমে যায়। কিন্তু পুজোর পর থেকে ওই কাপালিককে আর দেখা যায়নি। পরবর্তীকালে স্থায়ী মন্দির তৈরি করা হয়। তবে শতাধিক বছরের পুরনো ওই মন্দির দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থা হয়। ভক্তদের সহায়তায় চলতি বছরে মায়ের নতুন মন্দির স্থাপন করা হয়। আজ, রবিবার তার শুভ উদ্বোধন হবে।
কমিটির সম্পাদক সুজিত দাঁ বলেন, মা কালীর প্রতিষ্ঠার সময় কোনও পুরোহিত সেখানে পুজো করতে আসতে চাইছিলেন না। বংশীধর চট্টোপাধ্যায় নামে এক পুরোহিত বাড়ি থেকেই মায়ের পুজো করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু, মা কালী স্বয়ং তাঁকে লণ্ঠনের আলো দেখিয়ে বাড়ি থেকে মন্দির পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলেন। বর্তমানে তাঁদের বংশধরেরাই পুজো করেন। বৈষ্ণব মতে পুজো হয়।
কমিটির কোষাধ্যক্ষ শ্রীধর দে বলেন, তিন বছর অন্তর মায়ের নতুন কলেবর তৈরি করা হয়। এবার নতুন মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। আজ, শোভাযাত্রা শেষে ১০৮টি কলসে জল ভরে তা মন্দিরে রাখা হবে। পরে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মন্দির প্রতিষ্ঠা হবে। আমাদের মা কালী খুবই জাগ্রত। তিনি সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। সেই জন্য সারাবছরই মায়ের কাছে প্রচুর ভক্ত পুজো দিতে আসেন। এবার নতুন মন্দিরের প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে প্রচুর ভক্তের সমাগম হবে।