• স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ৪১ কোটি ২১ লক্ষ টাকা খরচ, ডাক্তারদের আন্দোলনের জের রমরমা ব্যবসা বর্ধমানের নার্সিংহোমগুলির
    বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: নিজেদের সুবিধা মতো দাবি আদায়ের জন্য তখন কাজ বন্ধ রেখে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করছিলেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা রোগীরা নাজেহাল হচ্ছিলেন। অপারেশন পিছিয়ে যাচ্ছিল। দিনের পর দিন চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই রোগীদের নার্সিংহোমে নিয়ে যান। বারবার অনুরোধের পরও জুনিয়র ডাক্তাররা অনড় ছিলেন। সরকারি হাসপাতালে তারা কর্মবিরতি পালন করায় বর্ধমানের নার্সিংহোমগুলি সেই সময় রমরমিয়ে ব্যবসা করেছে। 

    স্বাস্থ্যদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাস থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত নার্সিংহোম এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ৪১ কোটি ২১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ২৯হাজার ৩৩২জন রোগী বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করতে বাধ্য হয়েছেন। ওই সময় সরকারি হাসপাতালে ৯১৫জন রোগীর জন্য ওই কার্ডে মাত্র এক কোটি ৩১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। অনেক পিজিটি সরকারি হাসপাতালে কাজ না করে ওই সময় নার্সিংহোমগুলিতে অপারেশন করেছেন। তাঁরা সরকারি হাসপাতালে কাজ করলে এত রোগীকে নার্সিংহোমে যেতে হতো না বলে আধিকারিকদের দাবি। এক আধিকারিক বলেন, কোন কোন পিজিটি নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালে ওই সময় কাজ করেছেন, তার যাবতীয় তথ্য রয়েছে। প্রতিটি অপারেশনের জন্য তারা কত টাকা নিয়েছে, তাও সরকারের কাছে লিপিবদ্ধ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বন্ডে থাকা কোনও চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব না করে বাইরে এভাবে কাজ করতে পারে না। 

    পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় বলেন, ওই সময় আন্দোলনের নামে এক শ্রেণির চিকিৎসক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেহাল করে রাখতে চেয়েছিল। এক শ্রেণির সিনিয়র চিকিৎসক সেই সময় ব্যাপক সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু, তাদের পক্ষে বিপুল সংখ্যক  রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছিল না। সেই সুযোগ নার্সিংহোমগুলি নিয়েছে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ চিকিৎসা করেছে। নার্সিংহোমগুলিতে তারা কর্মবিরতি পালন করেনি।

    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আন্দোলনকারী কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ব্যুমেরাং হয়ে আসতে শুরু করেছে। সেই সময় তারা অভিযোগ করেছিল, উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেটের মাথারা তাদের অনুগামীদের পরীক্ষা হলে সহযোগিতা করেছিল। সম্প্রতি একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে শোনা যাচ্ছে আন্দোলনকারী এক চিকিৎসক পরীক্ষা হলে জুনিয়রদের বাড়তি সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। তিনি অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। চিকিৎসকদের একাংশর দাবি, ওই সময় জুনিয়র ডাক্তাররা শুধু সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতির পথে না হাঁটলেই ভালো করতেন। কাজ চালু রেখে তাঁরা আন্দোলন করতে পারতেন। সেটা না করে তাঁরা সরকারি হাসপাতালে কাজ বন্ধ রেখে অবস্থানে বসেন। তাঁদের অনেকে অবশ্য সেই সময়ও সুযোগ বুঝে নার্সিংহোমে চিকিৎসা করেছেন। সেই কারণেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সরকারের বিপুল টাকা খরচ হয়েছে বলে আধিকারিকদের দাবি।
  • Link to this news (বর্তমান)