পুরাতন মালঞ্চ: দক্ষিণাকালী মন্দিরের সঙ্গে জড়িত ভাস্কর পণ্ডিতের ইতিহাস
বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, মেদিনীপুর: পুরাতন মালঞ্চের দক্ষিণাকালী মন্দির খড়্গপুর শহরের প্রাচীন কালী মন্দিরের মধ্যে একটি। পুরো মন্দিরে টেরাকোটার কাজ রয়েছে। ভিতরে পাথরের কলসীর ওপর মোমের প্রলেপ দেওয়া কালীমূর্তি। কলসির ভিতরে থাকে অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি।
প্রায় ৩০০ বছর আগে খড়্গপুর শহরের পুরাতন মালঞ্চ এলাকায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। ট্রাস্টি কমিটির সদস্য সুভাষ বসু বলেন, খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার জকপুরের জমিদার রায় পরিবারের বংশধর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, রাখার জঙ্গলে মারাঠা বর্গি নায়ক ভাস্কর পণ্ডিত থাকতেন। তিনি এই মন্দিরে পুজো করে লুটপাট করতে বেরোতেন। সেজন্য অনেকে এই কালীকে ডাকাত কালীও বলেন।
স্থানীয় রূপেশ বসু বলেন, এই মন্দিরে দুর্গা ও রাধাবল্লভ পুজোও হয়। প্রতি বছর দুর্গাষষ্ঠীর দিন মোমের মূর্তির ওপর মোমের প্রলেপ দেওয়া হয়। এখানকার কালী ভক্তদের কাছে জাগ্রত বলে পরিচিত। সেজন্য কালীপুজোর দিন এখানে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষের সমাগম হয়। একসময় এটি রায় জমিদারদের ব্যক্তিগত পুজো ছিল। পরে ট্রাস্ট গঠন করা হয়। বংশ পরম্পরায় রায় পরিবারের সদস্যরাই ট্রাস্টের সভাপতি থাকেন। বর্তমানে সেই পদে রয়েছেন করুণাময় রায়। ইন্দার হিড়িম্বেশ্বরী দক্ষিণাকালী মন্দিরও খড়্গপুরের প্রাচীন মন্দিরের একটি। এই দেবীও জাগ্রত বলে ভক্তরা বিশ্বাস করেন। কথিত আছে, মহাভারতের হিড়িম্বা রাক্ষসীর আরাধ্য দেবী এই হিড়িম্বেশ্বরী। উত্তর ইন্দায় দেবীর মূল মন্দির ছিল। কথিত আছে, কালাপাহাড় সেই মন্দির ধ্বংস করে। তখন বিগ্রহ স্থানীয় একটি পুকুরে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে এক স্থানীয় বাসিন্দা বিগ্রহ পুকুর থেকে তুলে ফের প্রতিষ্ঠা করেন।
খড়্গপুর শহরে আরও অনেক কালীমন্দির আছে। সুভাষপল্লি, খরিদা, বরবাতি মহাকালী মন্দির, ইন্দা, ঝাপেটাপুর, মন্দিরতলা, কৌশল্যা-সর্বত্রই ভক্তিভরে কালীপুজো হয়। কৌশল্যার শ্মশানকালী মন্দিরে অবশ্য এসময় বেদীতে ছবি রেখে পুজো হয়। প্রায় ১০০ বছর আগে চৈত্র মাসের অমাবস্যায় মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তাই প্রতিবছর ওই সময় দেবীর মূর্তি তৈরি করে ঘটা করে পুজো হয়। তবে শ্মশানকালী হলেও এখানে দক্ষিণাকালী ধ্যানেই দেবীর পুজো হয়।